ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাফিজুর রহমানের আত্মহত্যার কারণ অনুসন্ধানে উদ্বেগজনক সব তথ্য উঠে এসেছে। সবচেয়ে ক্ষতিকর মাদক এলএসডি (লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইথালমাইড) সেবন তাঁকে আত্মহত্যায় উদ্বুদ্ধ করেছে বলে ধারণা করা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ বের করেছে। এলএসডি বিক্রির সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে, যাঁরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। অভিনব কায়দায় এসব মাদক দেশে এলেও আটকানোর চেষ্টা নেই।
হাফিজুরের ঘটনার রেশ না কাটতেই আরও দুটি অপরাধমূলক ঘটনার খবর এসেছে। শুক্রবার মানিকগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসার পথে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের শিকার হন এক নারী। এর সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ভারতের বেঙ্গালুরুতে সম্প্রতি দুর্বৃত্তদের দ্বারা এক তরুণীর নিগৃহীত হওয়ার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পর গোটা ভারতে তোলপাড় শুরু হয়। প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল জিঘাংসার শিকার মেয়েটি উত্তর-পূর্ব ভারতের। আসামের রাজ্য পুলিশ অপরাধীদের খুঁজে বের করে দেওয়ার জন্য পুরস্কারও ঘোষণা করে। পরে বের হয় মেয়েটি ও তাঁর নিগ্রহকারী চার তরুণের বাড়ি বাংলাদেশে। বেঙ্গালুরু পুলিশের উদ্ধৃতি দিয়ে ডেকান হেরাল্ড জানায়, ওই তরুণীকে নিগৃহীত করার দায়ে এক নারীসহ চার দুর্বৃত্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এ অপরাধ চক্রের হোতা টিকটক হৃদয় ও তাঁর সহযোগীদের নামে হাতিরঝিল থানায় মামলা হয়েছে। সহিংসতার শিকার মেয়েটির মা ও মামার ভাষ্য অনুযায়ী, বছরখানেক আগে মেয়েটিকে ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশের পুলিশ মেয়েটি ও তাঁকে নিগৃহকারী দুর্বৃত্তদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য বেঙ্গালুরু পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। মধ্যপ্রাচ্যে আকর্ষণীয় বেতনে চাকরি দেওয়ার নামে মেয়েটিকে টিকটক গ্রুপের সদস্যরা ভারতের বেঙ্গালুরুতে নিয়ে যান।
আমাদের তরুণ প্রজন্মকে বিপথগামী করার যেসব ধ্বংসাত্মক পন্থা আছে, তার মধ্যে টিকটক সংস্কৃতি ও কিশোর গ্যাং উল্লেখযোগ্য। টিকটক গ্রুপের হোতাদের দৌরাত্ম্য দেশের সীমা ছাড়িয়ে এখন বিদেশ পর্যন্ত পৌঁছেছে এবং এর সঙ্গে দেশি–বিদেশি পাচারকারীর যোগসাজশ থাকা অস্বাভাবিক নয়।
বেঙ্গালুরুতে বাংলাদেশি তরুণী নিগ্রহের ঘটনা অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়। প্রথমত, করোনাকালে দুই দেশের মধ্যে স্বাভাবিক যোগাযোগ বন্ধ থাকলেও কীভাবে টিকটক গ্রুপ সেখানে যেতে পারল? তারা পাসপোর্ট-ভিসা না নিয়ে গিয়ে থাকলে কীভাবে ভারতে ঢুকল? ওপারে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ এবং এপারে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি কী করেছে? যে সীমান্তে গরু চোরাচালানিরা বিএসএফের নির্বিচার গুলিতে হতাহতের শিকার হয়, সেই সীমান্তে মানব পাচারকারীরা নিরাপদে গন্তব্যে গিয়ে নানা রকম অপরাধ সংঘটিত করছে।
বেঙ্গালুরু পুলিশ আক্রান্ত মেয়েটিকে উদ্ধার করেছে এবং দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তার করেছে। এ জন্য তারা ধন্যবাদ পেতে পারে। এখন বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্ব হবে দ্রুত মেয়েটিকে দেশে ফিরিয়ে এনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। সেই সঙ্গে অপরাধীদের ফেরত এনে আইনের আওতায় নিয়ে আসা। ভারতের সঙ্গে আমাদের বন্দী বিনিময় চুক্তি আছে। ফলে সেখানে আটক দুর্বৃত্তদের ফেরত আনা কঠিন হবে না। আশুলিয়ার ঘটনায় ছয় আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে। তাঁদেরও যত দ্রুত সম্ভব বিচারের আওতায় আনতে হবে।