বিনোদন ডেস্ক : ঢাকার চলচ্চিত্রের বড় বাজেটের অনেকগুলো ছবির শুটিং আটকে আছে দীর্ঘদিন। সেই তালিকায় আছে ‘মাই ডার্লিং’, ‘আগুন’, ‘আকবর: ওয়ানস আপন আ টাইম ইন ঢাকা’, ‘ঢাকা ২০৪০’, ‘স্বপ্নবাজি’সহ বেশ কয়েকটি সিনেমা। কোনো ছবির কাজ সাত বছর, আবার কোনো কোনো ছবির কাজ দুই বছরেও শুরু হয়নি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছ থেকে জানা গেছে, ছবিগুলোর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। কারণ, এই করোনাকালে চলচ্চিত্র ব্যবসায় ধস নেমেছে। দর্শকের অভাবে সিনেমা হলের সংখ্যা দিন দিন কমেই চলেছে। আবার কোনো কোনো আটকে থাকা ছবির বাকি কাজ শেষ করতে বড় বাজেট প্রয়োজন। এসব বিবেচনায় উল্লেখিত ছবিগুলোর পরবর্তী শুটিং অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
শাকিব খান ও অপু বিশ্বাস অভিনীত ‘মাই ডার্লিং’ ছবিটির শুটিং আটকে যায় ২০১৪ সালে। এখনো ছবির প্রায় ৩০ ভাগ কাজ বাকি। মাঝে কাজটি শেষ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নায়ক-নায়িকার শিডিউল মেলানো যায়নি। ২০১৭ সালে শাকিব-অপুর বিবাহবিচ্ছেদের কারণে কাজটি প্রায় অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। পরে তাঁরা আর পরস্পরের সঙ্গে কাজ করতে চাননি। প্রযোজক ও পরিচালক সমিতির মধ্যস্থতায় ২০২০ সালের প্রথম দিকে দুজনকে রাজি করানো হয়েছিল।
ছবির প্রযোজক মনির হোসেন বলেন, ‘চলচ্চিত্রের দুটি সংগঠনের মধ্যস্থতায় গত বছর কাজটি করার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু পরে আর করা হয়নি। এখন ছবিটা শেষ করতে আরও ৩০ লাখ টাকা লাগবে।’ তিনি বলেন, ‘আগেই প্রায় এক কোটি টাকা খরচ হয়ে গেছে। এখন করোনাকালে সিনেমা ব্যবসার যে অবস্থা, তাতে বাড়তি টাকা বিনিয়োগ করতে ভয় পাচ্ছি। তা ছাড়া এত দিন পর শুটিং করলে আগের ফুটেজের সঙ্গে নায়ক-নায়িকার এখনকার চেহারা মিলবে না। শেষ করলেও বিনিয়োগের অর্ধেকও তুলে আনা যাবে না। ছবিটি নিয়ে কী করব, মাথায় আসছে না।’
শাকিব খানের আরেকটি ছবি ‘আগুন’-এর শুটিংও বন্ধ। গানসহ প্রায় ১৫ শতাংশ শুটিং বাকি। ২০১৯ সালের শুরুর দিকে শুটিং শুরু হয় ছবিটির। ওই বছরের অক্টোবর মাসে ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিতে আটকে এখনো কারাবাসে ছবিটির প্রযোজক। দুই বছর ধরে আটকে আছে এ ছবি। এর মাঝে বেশ কয়েকবার বাকি কাজ শেষ করার উদ্যোগ নেন পরিচালক। কিন্তু প্রযোজক জেলে থাকায় বিনিয়োগের অভাবে সেটা আর সম্ভব হয়নি।
শোনা গিয়েছিল বাকি কাজ শেষ করতে শাকিব খান নিজেই বিনিয়োগ করবেন। কিন্তু পরে সেটাও হয়নি। যদিও ছবির পরিচালক জানান, শাকিব খানের এখনো বিনিয়োগে আগ্রহ আছে। পরিচালক বদিউল আলম খোকন বলেন, ‘মাঝে বেশ কয়েকবার শুটিং করতে চেয়েছিলাম। লোকেশনও দেখেছিলাম। নতুন করে আবার ভাবছি।’ ছবিসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে, এই ছবির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। প্রযোজক কবে ছাড়া পাবেন, কবে ছবি শেষ করবেন, ঠিক নেই। অন্য কেউ সাহস করে এই ছবিতে বিনিয়োগ করবেন না। শাকিব প্রথমে করতে চেয়েছিলেন। ঝামেলার আশঙ্কায় সরে গেছেন।
এদিকে মাহিয়া মাহি, পিয়া জান্নাতুল, তানভির অভিনীত ‘স্বপ্নবাজি’ ছবিটির শুটিং আটকে আছে প্রায় দেড় বছর। পরিচালক অন্য সিনেমা নিয়ে ব্যস্ত। মাত্র ৫ দিন শুটিং হয়েছিল ‘স্বপ্নবাজি’র। পরে কবে শুটিং হবে, তার নিশ্চয়তা দিতে পারেননি ছবির প্রযোজক। তাই ‘স্বপ্নবাজি’ নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা।
তবে ছবির প্রযোজক পিয়াল হোসাইন বলেন, ‘কাজ শেষ করতে চাই। কিন্তু করোনা না গেলে শুটিং করা যাচ্ছে না। তা ছাড়া এই সিনেমায় বাজেট কোটি টাকার ওপরে। বর্তমানে সিনেমার এই দুরবস্থায় বিনিয়োগ করতে সাহস পাচ্ছি না।’
একই অবস্থা ‘আকবর: ওয়ানস আপন আ টাইম ইন ঢাকা’ সিনেমার। ইমন ও ববিকে নিয়ে মাত্র দুটি গানের শুটিং করা হয়েছিল ছবিটির। প্রায় দেড় বছর হলো ছবিটির বাদবাকি শুটিং আটকে আছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছবির এক অভিনয়শিল্পী জানান, এই ছবির বাজেট প্রায় কোটি টাকার ওপরে। এই মন্দাবস্থায় প্রযোজক আর টাকা বিনিয়োগ করতে রাজি নন। তাই ছবিটি শেষ করা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। বিষয়টি স্বীকার করে ছবির পরিচালক সৈকত নাসির বলেন, ‘ছবির বাজেট কমিয়ে ৬০ থেকে ৭০ লাখে নামাতে বলেছেন প্রযোজক। কিন্তু যে চিত্রনাট্য দিয়ে ছবির কাজ শুরু হয়েছে, বাজেট কমানো সম্ভব না। এখন কমাতে হলে অবশ্যই চিত্রনাট্য নতুন করে আবার করতে হবে।’
২০১৯ সালের মাঝামাঝি আটকে আছে আরেক সিনেমা ‘ঢাকা ২০৪০’-এর কাজ। পরিচালক দীপংকর দীপন ব্যস্ত ‘অপারেশন সুন্দরবন’ ছবির পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ ও নতুন ছবি ‘অন্তর্জাল’-এর প্রস্তুতি নিয়ে। ‘ঢাকা ২০৪২’ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দীপন বলেন, ‘এই মুহূর্তে বলতে পারব না। ছবির কাজ পুরোপুরি স্থগিত। প্রযোজক এগিয়ে না এলে কীভাবে শেষ হবে?’ এই ছবিতে অভিনয় করছেন নুসরাত ফারিয়া, বাপ্পী চৌধুরী প্রমুখ।