ডেস্ক রিপোর্ট : আগুনে পুড়ে মৃত্যু অনেক বেশি হৃদয় বিদারক। আর সে দৃশ্য যদি হয় এমন যে, মায়ের খোঁজে মর্গে ভাইয়ের সঙ্গে ছয় বছরের পাখি’ তা যে কতবেশি হৃদয় বিদারক; যা বলে/লিখে প্রকাশ করা যায় না। তবে আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া এসব ব্যক্তি ও তার পরিবারের জন্য সান্ত্বনা দিয়েছেন স্বয়ং বিশ্বনবি। কেননা অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যুবরণকারীদের জন্য রয়েছে শাহাদাতের মর্যাদা।
ইসলামের দৃষ্টিতে আগুনে পুড়ে নির্মমভাবে মৃত্যুবরণকারীদের জন্য শাহাদাতের মর্যাদা ঘোষণা করেছেন স্বয়ং বিশ্বনবি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহর পথে জেহাদে নিহত হওয়া ছাড়াও সাত ধরনের শাহাদাত রয়েছে।’
গত বৃহস্পতিবার বিকালে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ভুলতা কর্ণগোপ এলাকায় সেজান জুসের কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে৷ সরকারি হিসাব মতে এ অগ্নিকাণ্ডে ৫৩ জনের অগ্নিদগ্ধ লাশ উদ্ধার হয়েছে। এর আগে গত তাদের মধ্যে মাত্র তিনজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। পরিবার-পরিজনসহ সবার কাছেই এর চেয়ে হৃদয়বিদারক ঘটনা আর হতে পারে না।
গত কিছুদনি আগে ঢাকার মগবাজারেও ঘটে গেলো ভয়াবহ বিস্ফোরণ। এ দুর্ঘটনায়ও ৮ জন নিহত হওয়ার পাশাপাশি অর্ধশতাধিক আহত হয়েছে। বিগত কয়েক বছর আগে ঢাকার নিমতলী অগ্নিকাণ্ড, আশুলিয়ার তাজরিন ফ্যশনে অগ্নিকাণ্ডসহ এসব দুর্ঘটনা নিঃসন্দেহে হৃদয়বিদারক।
অগ্নিকাণ্ডে নিহত এসব ব্যক্তিরা বিশ্বনবির ঘোষণায় শহিদ। হাদিসে এসেছে, আল্লাহর রাস্তায় জেহাদে অংশগ্রহণ ছাড়াও ৭ ধরনের ব্যক্তি শাহাদাতের মর্যাদা পাবে। তারা হলেন-
১. প্লেগ-মহামারিতে যে মারা যায়, সে শহিদ।
২. পানিতে ডুবে যে মারা যায় যায়, সে শহিদ।
৩. শয্যাশায়ী অবস্থায় যে মারা যায়, সে শহিদ।
৪. পেটের পীড়ায় যে মারা যায়, সে শহিদ।
৫. আগুনে পুড়ে যে মারা যায়, সে শহিদ।
৬. ভূমি, ভবন বা দেয়াল ধসে যে মারা যায়, সে শহিদ।
৭. যে নারী গর্ভধারণে বা প্রসবজনিত কষ্টে মারা যায়, সে শহিদ।’ (আবু দাউদ, নাসাঈ)
হৃদয়বিদারক এ শোকের সময় গোটা উম্মাহর জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পক্ষ থেকে ধৈর্যধারণের সান্ত্বনা। হত্যাকাণ্ডে নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা। এ গভীর শোকের সময় ধৈর্যধারণে কুরআনুল কারিমের এ আয়াতও হতে পারে অনন্য উপায়। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘অবশ্যই আমি তোমাদের পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও প্রাণের ক্ষতি ও ফলফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও ধৈর্যশীলদের। যখন তারা বিপদে পড়ে, তখন বলে, নিশ্চয়ই আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তাঁরই কাছে ফিরে যাব। তারা সেসব লোক, যাদের প্রতি আল্লাহর অফুরন্ত অনুগ্রহ ও রহমত রয়েছে এবং এসব লোকই হেদায়েতপ্রাপ্ত।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৫৫-১৫৭)
আল্লাহর কাছে প্রার্থনা
হঠাৎ করে ঘটে যাওয়া এমন দুর্ঘটনা মাঝে মধ্যেই ঘটতে দেখা যায়। হঠাৎ ঘটে যাওয়া এসব বিপদ-আপদ ও ক্ষতি থেকে নিরাপদ থাকতে তাওবাহ-ইসতেগফারসহ নিয়মিত সকাল-সন্ধ্যায় একাধিক দোয়া ও আমল রয়েছে। যার ফলে মহান আল্লাহ অনাকাঙিক্ষত এসব অগ্নিকাণ্ড, ভূমিধ্বস, লঞ্চডুবিসহ যাবতীয় দুর্ঘটনা ও বিপদ থেকে রক্ষা করবেন। হাদিসে এসেছে-
হজরত জুবাইর ইবনু আবু সুলাইমান ইবনু জুবাইর ইবনু মুত্বইম রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি ইবনু ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলতে শুনেছি, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সকাল ও সন্ধ্যায় উপনীত হয়ে (বিপদ-আপদ থেকে রক্ষায়) এ দোয়াগুলো পড়া ছেড়ে দিতেন না-
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ فِيْ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ
، اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ فِيْ دِيْنِيْ وَدُنْيَايَ وَأَهْلِيْ، وَمَالِيْ
، اَللّٰهُمَّ اسْتُرْ عَوْرَاتِيْ، وَآمِنْ رَوْعَاتِيْ
، اَللّٰهُمَّ احْفَظْنِيْ مِنْ بَينِ يَدَيَّ، وَمِنْ خَلْفِيْ
، وَعَنْ يَمِيْنِيْ، وَعَنْ شِمَالِيْ، وَمِنْ فَوْقِيْ
، وَأَعُوْذُ بِعَظَمَتِكَ أَنْ أُغْتَالَ مِنْ تَحْتِيْ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল আফওয়া ওয়াল আফিয়াতা ফিদ্দুনইয়া ওয়াল আখিরাতি। আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল আফওয়া ওয়াল আফিয়াতা ফি দ্বীনী ওয়া দুনইয়াইয়া, ওয়া আহলি ওয়া মালি। আল্লাহুম্মাসতুর আওরাতি ওয়া আমিন রাওআতি। আল্লাহুম্মাহফাজনি মিম্বাইনি ইয়াদাইয়্যা ওয়া মিন খালফি ওয়া আন ইয়ামিনি ওয়া শিমালি ওয়া মিন ফাওকি।
ওয়া আউজু বিআজামাতিকা আন উগতালা মিন তাহতি।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে দুনিয়া ও আখেরাতের ক্ষমা ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি।
হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে ক্ষমা এবং নিরাপত্তা চাই আমার দ্বীন, দুনিয়া, পরিবার ও অর্থ-সম্পদের।
হে আল্লাহ! আপনি আমার গোপন ত্রুটিসমূহ ঢেকে রাখুন; আমার উদ্বিগ্নতাকে নিরাপত্তায় রূপান্তরিত করুন।
হে আল্লাহ! আপনি আমাকে হেফাজত করুন- আমার সামনের দিক থেকে, আমার পেছনের দিক থেকে, আমার ডান দিক থেকে, আমার বাম দিক থেকে এবং আমার উপরের দিক থেকে। আর আপনার মহত্ত্বের ওসিলায় আমার নীচ থেকে হঠাৎ আক্রান্ত হওয়া থেকে আশ্রয় চাই।’ (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া অগ্নিকাণ্ডসহ বিভিন্ন সময়ে যারা অগ্নিকাণ্ডে নিহত হয়েছেন, আল্লাহ তাআলা তাদের শাহাদাতের মর্যাদা দান করুন। তাদের পরিবার-পরিজনকে ধৈর্যধারণ করার তাওফিক দান করুন। দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণে তাদের জীবন ভরপুর করে দিন। আমিন।