শিশুরা জাতির ভবিষ্যৎ। একথা সবারই জানা। রাজনীতিক, সমাজ সেবক প্রায় প্রত্যেকের বক্তৃতা বিবৃতিতে এ আপ্তবাক্য উচ্চারিত হতে শোনা যায়। কিন্তু দুখঃজনক হচ্ছে এই যে, তাদের র্বতমান অবস্থা কি তা নিয়ে আমাদের ভাবনা নেই। ঘর ও স্কুলের চৌকাঠ পেরিয়ে তাদরে প্রিয় স্থান হচ্ছে খেলার মাঠ। অথচ, এই খেলার মাঠগুলো সীমানা প্রাচীর দিয়ে শিশুদের খেলার পরিবেশকে রুদ্ধ করে দিচ্ছে। এর ফলে অনেক শিশুকে রাস্তা অথবা গলিতে খেলতে দেখা যায়। জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রসার ও বৃদ্ধির জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিকল্প নেই। কিন্তু শিশুদের মানসিক বিকাশের জন্য খেলার মাঠ থাকাও অতি জরুরী। এই বিষয়ে সমাজ সেবক ও সচেতন মহলের দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।
আজকের শিশুরাই একদিন এই জাতির হাল ধরবে। ফলে তাদের সুকুমার বৃত্তি ও মানসিক বিকাশ একান্তই অপরিহার্য। কম্পিউটার বিজ্ঞানের এই যুগে আমাদের অনেক শিশুকেই ঘরমুখো হয়ে থাকতে দেখা যায়। তারা মাঠে একটি শালিক দেখারও সুযোগ পায় না। কম্পিউটারে দেখে নেই তার প্রয়োজনীয় শালিক। খুব ভোরে বিছানা ছেড়ে তাদেরকে ভারী বইয়ের সম্ভার নিয়ে যেতে হয় স্কুলে।
অনকে সময় দেখা যায় ব্যাগের ওজন তার নিজের ওজন থেকে বেশী । ভোরের নির্মল বাতাসকে ভালোভাবে উপভোগ করার সময় হয় না।
ফলে প্রকৃতগিতভাবে মানুষের মতো মানুষ হয়ে উঠতে পারে না। যান্ত্রকিতার বেড়াজালে আবদ্ধ আমাদের শিশুরা। নিজেদের মত করে কোনো জিনিসকে নিয়ে ভাববার অবকাশ তাদের নেই। শুধু আমাদের দেশ নয়, উন্নত বিশ্বের প্রথম সারির একটি দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিশুরাও এই অবস্থার শিকার। এই সমস্ত কারণে বড়দের মতো শিশুদেরও বিভিন্ন মানসিক রোগ হতে পারে। সামাজিক ও পরিবেশগত ভারসাম্যহীনতার কারণে বয়ঃসন্ধিকালে অনেক শিশুকেই বিভিন্ন রকম মানসিক সমস্যায় ভুগতে দেখা যায়। ফলে শিশুদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের আসক্তি সমাজ বিমুখতা এমনকি আত্মহত্যার প্রবণতাও সৃষ্টি হয়।
শিশুদের এহেন সমস্যা দুর করার জন্য জাতিসংঘের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন কাজ করে যাচ্ছে। শিশু অধিকার সর্ম্পকে ১৯২৪ সালের জেনেভা ঘোষণা ও ১৯৫৯ সালের ২০ নভেম্বর সাধারণ পরিষদে গৃহীত শিশু অধিকার ঘােষনায় শিশুদের প্রতি বিশেষ যত্নের কথা বর্ণিত হয়েছে। শিশু অধিকার সনদ ধারা-৩১ এ বলা হয়েছে (১) শরীক রাষ্ট্র সমূহ শিশুর বিশ্রাম ও অবকাশ যাপন, বয়স অনুযায়ী উপযুক্ত খেলাধুলা ও বিনোদনমূলক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ এবং সাংস্কৃতিক জীবন ও সুকুমার শিল্পে অবাধে অংশগ্রহণের অধিকার স্বীকার করে। (২) শরীক রাষ্ট্রসমূহ সংস্কৃতি ও শিল্প সংক্রান্ত জীবনে শিশুরা পরিপূর্ণ অংশগ্রহণের অধিকারকে সম্মান দেবে ও জোরদার করবে এবং সংস্কৃতি সুকুমার শিল্প , বিনোদন ও অবকাশমূলক কার্যক্রমে যথাযথ ও সমান সুযোগ থাকার ব্যবস্থাকে উৎসাহিত করবে বিশ্বের প্রথম যে ২২ টি দেশ জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ অনুসর্মথন করেছিল তার মধ্যে একটি দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ। ১৯৯১ সালের ২ সেপ্টেম্বর থেকে এই সনদের বাস্তবায়ন কল্যাণে যথাসম্ভব উদ্যােগ ও সহযোগিতা প্রদানে বাংলাদেশ সরকার দেশের জনগণ এবং জাতিসংঘের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ।
যান্ত্রিকতার যন্ত্রনা থেকে শিশুদের মুক্ত করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল ছাড়াও সমাজের সচেতন অংশের দৃষ্টি দেওয়া একান্ত প্রয়োজন।
লেখক : অ্যাডভোকেট কাজী মনিরুল ইসলাম (রাজা)।