ডেস্ক রিপোর্ট: যুগের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশ ও জাতির সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং সাধারণ মানুষের কাছে পুলিশি সেবাকে সহজে পৌঁছে দিতে বাংলাদেশ পুলিশে যুক্ত হলো আধুনিক অপারেশনাল গিয়ার। ১৬ ডিসেম্বর থেকে এই অত্যাধুনিক অপারেশনাল গিয়ার চালু করা হবে।
মঙ্গলবার (১৫ ডিসেম্বর) সকালে বাংলাদেশ পুলিশের একটি অনুষ্ঠানে পুলিশের আইজিপি বেনজীর আহমেদ এ তথ্য জানান। অনুষ্ঠান শেষে এই অত্যাধুনিক অপারেশনাল গিয়ারটি উদ্বোধন করা হবে।
বাংলাদেশ পুলিশ। মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রতিরোধ গড়া গর্বিত এক প্রতিষ্ঠান। সেই ১৮৬১ সাল থেকে পথচলা শুরু। সময়ের বিবর্তনে অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে এগিয়ে চলছে পুলিশ। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বুকে ধারণ করে বাংলাদেশ পুলিশ যে কোনো প্রয়োজনে দেশ ও জনগণের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে কার্পণ্য না করা বিশ্বস্ত এক প্রতিষ্ঠান।
বাংলাদেশ পুলিশের আইজি বেনজীর আহমেদ, বিপিএম (বার) বলেন, পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনায় ও বাস্তবতার নিরিখে নানাভাবে পরিবর্তিত হয়েছে পুলিশ। যুগের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশ ও জাতির সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং সাধারণ মানুষের কাছে পুলিশি সেবাকে সহজে পৌঁছে দিতে বাংলাদেশ পুলিশ বিভিন্ন সময়ে অনেক যুগান্তকারী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সেই ধারাবাহিকতায় জনগণের সেবা, সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
দূরদর্শী ও একসময় উপযোগী উদ্যোগ- “বাংলাদেশ পুলিশে সর্বাধুনিক অপারেশনাল গিয়ার প্রচলন।” মুজিববর্ষে দেশের মানুষকে আধুনিক বাংলাদেশের পুলিশে এক প্রতিচ্ছবি দেখাতেই সর্বাধুনিক এই অপারেশনাল গিয়ার প্রবর্তন করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশে এটি চালু করা হবে। পর্যায়ক্রমে এটি সারাদেশে চালু করবে বাংলাদেশ পুলিশ। সর্বাধুনিক এই অপারেশনাল গিয়ারটি তিনটি বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত :
১। ট্যাকটিক্যাল বেল
২। স্মল আর্মস উইথ থাই হালেস্টার
৩। হ্যান্ডস ফ্রি কমিউনিকেশন
সর্বাধুনিক এই অপারেশনাল গিয়ার চালু করার উদ্দেশ্য:
১। পুলিশ সদস্যদের কর্মদক্ষতা ও অপারেশনাল সক্ষমতা বৃদ্ধিকল্পে দায়িত্ব পালনকালে হাত খালি বা হ্যান্ডস ফ্রি রাখা।
২। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে রুটিন দায়িত্ব পালনকালে ভারী ও বহনে কষ্টকর লং আর্মসের পরিবর্তে হালকা ও সহজে বহনযোগ্য শর্ট আর্মস ব্যবহার করা।
৩। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতে অধিক ক্যাজুয়ালটি এড়াতে অত্যধিক ক্ষমতাসম্পন্ন লং ব্যারেল আর্মসের ব্যবহার ধারাবাহিকভাবে কমিয়ে আনা।
৪। পুলিশ সদস্যদের দীর্ঘক্ষণ দায়িত্ব পালনকে সহজ করে কমফোর্ট দেওয়ার ব্যবস্থা করা।
৫। উপনিবেশিক উত্তরাধিকার ধারা থেকে বেরিয়ে আসা।
৬। বিশ্বের অপরাপর আধুনিক দেশের মতো বাংলাদেশ পুলিশকে গড়ে তোলা।
৭। পুলিশ ও জনগণের মধ্যে মানসিক দূরত্ব কমিয়ে আনা এবং পুলিশি সেবাকে আরও সহজসাধ্য করা।
তবে, অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির উদ্ভব হলে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয়। এক্ষেত্রে লং আর্মসের ব্যবহার অব্যাহত রাখবে পুলিশ। সর্বাধুনিক এই অপারেশনাল গিয়ার চালু করার বিশেষত্ব: একজন পুলিশ সদস্যের দায়িত্ব পালনকালে যেসব সরঞ্জামাদির প্রয়োজন হয়, তার সবই এই অপারেশনাল গিয়ারের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে।
জনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের জন্য অতীব প্রয়োজনীয় সরঞ্জামগুলো এমনভাবে সংযোজন করা হয়েছে, যাতে দায়িত্বপালনকালে একজন পুলিশ সদস্য খুব সহজেই দরকারি জিনিস মুহূর্তের মধ্যেই পেয়ে যান। ট্যাকটিক্যাল বেল্টের সঙ্গে থাই হালেস্টার যুক্ত করে সেখানে স্মল আর্মস রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এ ছাড়া বেল্টের সঙ্গে এক্সপ্যান্ডেবল ব্যাটন, টর্চলাইট, হ্যান্ড কাফ ও ওয়াটল বটল রাখার সুযোগ রয়েছে। জরুরি মুহূর্তে দ্রুত মেসেজ আদান-প্রদান নিশ্চিত করতে ওয়ারলেস সেটের সঙ্গে একটি মাইক্রোফোন ও ওয়ারলেস সেট জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এতে করে দায়িত্ব পালনকালে পুলিশ সদস্যরা ওয়ারলেস সেট মুখের কাছে না এনেই মেসেজ আদান-প্রদান করতে পারবেন।
নতুন এই অপারেশনাল গিয়ার চালু করায় পুলিশ সদস্যদের পূর্বের মতো কাঁধে বা হাতে করে অস্ত্র বহন করতে হবে না। হাত ফাঁকা থাকায় জনগণের যে কোনো প্রয়োজনে দুই হাত ব্যবহার করেই সহযোগিতার জন্য এগিয়ে যেতে পারবে পুলিশ সদস্যরা। এ ছাড়াও সর্বাধুনিক এই অপারেশনাল গিয়ার বাংলাদেশ পুলিশকে একটি স্মার্ট লুক এনে দেবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘জনবান্ধব পুলিশ হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন।
একই সঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশের আধুনিকায়নের জন্য তার সময়কালে ব্যাপকভিত্তিক প্রশংসনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। তিনি ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছেন। সেই উন্নত বাংলাদেশের উপযোগী পুলিশ হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার আওতায় কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ পুলিশ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রত্যাশিত “জনতার পুলিশ” হতে সর্বাধুনিক অপারেশন গিয়ারের মতো আধুনিক সরঞ্জামের সংযোজনের ধারা অব্যাহত রাখবে বাংলাদেশ পুলিশ।