ঢাকার দোহার উপজেলার সুতারপাড়া এলাকায় পুলিশের পরিচয়ে এক যুবককে আটকের পর মোটা অঙ্কের টাকা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগীর দাবি অনুযায়ী, এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট দুই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের মাঝে চরম ক্ষোভ ও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। পরবর্তীতে, ঘটনা প্রকাশ হলে, পুলিশ ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে চেষ্টা করে।
ভুক্তভোগী লিমনের ছোট ভাই ইমন ব্যক্তিগত কাজ শেষে হলের বাজার থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। বাড়ির মাত্র ১০০ গজ দূরে পৌঁছালে, দুইজন ব্যক্তি তার গতিরোধ করেন এবং নিজেদেরকে দোহার থানার পুলিশ কর্মকর্তা এএসআই আরিফ ও এএসআই মনির পরিচয় দেন।
লিমনের অভিযোগ, বাড়ি ফেরার পথে দুই এএসআই প্রথমে তাকে জেরা করেন, পরে শরীর তল্লাশি করে তার মোবাইল ফোনটি কেড়ে নেন। এরপর এএসআই মনির একটি নম্বরে ফোন করেন। কিছু সময় পর একজন মুখে মাস্ক পরা ব্যক্তি এসে পুলিশদের কাছে কিছু হস্তান্তর করেন, যা নিয়ে পুলিশের আচরণ আরও রহস্যজনক হয়ে ওঠে।
এসময় পুলিশ সদস্যরা লিমনকে জানান, তারা তার পকেট থেকে ইয়াবা পেয়েছেন। তাকে আদালতে চালান দেওয়া হবে। ভয়ভীতি প্রদর্শন করতে থাকেন। বলেন, বাচতে হলে কাছে কি আছে, সেটা দিতে হবে। এসময় লিমনের মোবাইলে থাকা ১৪,৮০০/- টাকা বিকাশের মাধ্যমে বিকেল ৪:৩৩ মিনিটে হাতিয়ে নেয় দুই পুলিশ কর্মকর্তা। দোহার থানার গেটের বিপরীতে মোবাইল হসপিটাল এজেন্ট পয়েন্ট থেকে টাকা ক্যাশ আউট করা হয়। আর পকেটে থাকা আরও ৮৬০০/- টাকা হাতিয়ে নেয়।
পরবর্তীতে, দুই এএসআই মনির ও আরিফ বলে, মোবাইল ফেরত পেতে হলে আরও ৪০,০০০ টাকা দিতে হবে নাহলে ইয়াবা মামলায় ফাঁসানো হবে।
মানসিকভাবে চরম ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে, লিমন তার ভাই ইমনকে টাকার জন্য ফোন দেয়। ইমন তার কর্মস্থল থেকে অগ্রিম বেতন বাবদ ২০,০০০/- টাকা নিয়ে আসলে, রাত আনুমানিক ৭:৩০টার দিকে কাজীরচরে বড় ব্রীজের উপর থেকে দুই পুলিশ কর্মকর্তার সাথে ২০,০০০/- টাকায় রফাদফা হয় এবং লিমন মোবাইল ফেরত পায়।
এভাবে সর্বমোট ৪৩,৪০০/- টাকা মাদক মামলায় ফাসিয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে ৩ বারে হাতিয়ে নেয় দুই এএসআই মনির ও আরিফ।
অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত এএসআই মনিরকে ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, “আমার সাথে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।” যখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, তিনি কেন মোবাইল ও টাকা নিয়েছেন, তিনি জানান, “আমার সাথে তাদের একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। এটা তার ভাইয়ের সাথে কথা বলে মিটমাট হয়ে গেছে।”
তিনি আরও বলেন, “ভাই, আপনি চাইলে আমার ক্ষতি করতে পারেন। আমার চাকুরী নিয়ে সমস্যা হবে। আমার ক্ষতি কইরেন না। বিকেলে আমার সাথে দেখা করেন, কথা বলি। এরপর প্রয়োজন হলে নিউজ করেন।”
এই বিষয়ে একটি অভিযোগপত্র ডিএমপি বরাবর কুরিয়ার সার্ভিসে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইমন।
এদিকে লিমন এই প্রতিবেদককে বলেন, ভাই, বিভিন্ন দিক থেকে ফোন ও চাপ আসছে। আমরা পারিবারিকভাবে আতংকিত। এখন কি করবো বুঝতে পারছি না।
অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে পুলিশ হেড কোয়ার্টার ও রেন্জ ডি আই জি কার্যালয়ে অভিযোগ পত্র কুরিয়ার মাধ্যমে পাঠানো হয়।
এ ঘটনায় স্থানীয় জনগণের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এতে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পারিবারিক সদস্য বলেন, “যদি সত্যি পুলিশ এমন ঘটনা ঘটায়, তবে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে? এরা আমাদের নিরাপত্তা দেবে না, বরং ভয় দেখিয়ে টাকা নেয়? এরকম মাঝে মাঝেই শুনি। থানা এখন আবার টাকা পয়সা লেনদেন শুরু হয়েছে। বিচারও হয় থানায়। পুলিশ ক্লিয়ারেন্সও এখন টাকা লাগে।
সুশাসন, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার স্বার্থে তদন্তের দাবি জানিয়ে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ বলেছেন, এই ঘটনায় একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করা হোক। প্রয়োজনে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হোক। ভিক্টিম আইনি সহায়তা চাইলে, দেয়া হবে বলে তিনি আস্বস্ত করেছেন।
এ বিষয়ে দোহার সার্কেল এএসপি আশরাফুল আলম জানান, আমাদের বরাবর সরাসরি কোন অভিযোগ আসে নাই, অভিযোগ আসলে তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।