মো. নাজমুল হোসেন : শিক্ষা সাফল্য ও ঐতিহ্য নিয়ে ১০০ বছর ধরে মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপিঠ চুড়াইন তারিণীবামা উচ্চ বিদ্যালয়। এ বিদ্যালয় থেকে হাজার হাজার শিক্ষার্থী পাশ করে সমাজ উন্নয়নসহ দেশ বিদেশের বিভিন্ন স্থানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এই ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয়ের ২০২৩ সালে ১০০ বছর পূর্ণ হতে চলেছে। ইতোমধ্যে আমরা যে সকল আয়োজন হাতে নিয়েছি, চুড়াইন তারিণী বামার এ আয়োজন আগামী শতবর্ষ পর্যন্ত মনে থাকবে। শনিবার (৮ অক্টোবর) দুপুরে ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার চুড়াইন তারিণী বামা উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানের মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে দেশ বরেন্য শিল্পপতি, শতবর্ষ উদযাপন কমিটির আহবায়ক ও ইউনিক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বীরমুক্তিযোদ্ধা মোহা. নূর আলী এসব কথা বলেন।
মোহা. নূর আলী বলেন, তোমরা অনেকে জানো আবার অনেকে জানো না তারীণী বামা স্কুল মুক্তিযুদ্ধের সময় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছে। এই বিদ্যালয় মুক্তিযুদ্ধের স্বাক্ষী।
তিনি বলেন, আমি যখন ছাত্রলীগের সভাপতি হই তখন আমি এই বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। এই স্কুলের ঘন্টা বাজিয়ে সকল শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমি মুক্তিযুদ্ধের আন্দোলনে অংশ নিয়েছি। পর্যায়ক্রমে বর্তমান সরকারি নবাবগঞ্জ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ঘন্টা বাজিয়েও আমি বিদ্যালয়ের ছাত্রদের নিয়ে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি।
মোহা. নূর আলী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, তুমি কি হতে চাও এখনই লক্ষ ঠিক করতে হবে। আমার বয়স ৬৮ চলছে কিন্তু এখনও আমি ১৮ ঘন্টা পরিশ্রম করি। পরিশ্রম না করলে জীবনে কখনোই উন্নতি করা যাবে না। মনে রাখবে অলস মানুষরা মৃত্যুর আগেই মরে যায়।
তিনি আরো বলেন, তোমরা এই বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থীরা এখানে উপস্থিত রয়েছো। আমি তোমাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই নিজেদের মধ্যে সর্বপ্রথম লিডারশিপ তৈরি করতে হবে। জীবনকে সুন্দর ও সফল করতে লিডারশিপের অনেক গুরুত্ব রয়েছে।
নূর আলী বলেন, কথায় আছে ছাত্র জীবন সবচেয়ে সুখের জীবন যদি না থাকে এক্সজামিনেশন। আমি ছোট বেলায় ভাবতাম যদি আসলেই পরিক্ষা না থাকতো, যদি অটো পাশ করতে পারতাম তাহলে কতই না ভালো হত। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি পরিক্ষা ছিলো বলেই প্রতিযোগীতা ছিলো।
তিনি আরো বলেন, আমি এই বিদ্যালয়ে এসে লক্ষ করেছি তোমরা যারা ছাত্রছাত্রী আছো তোমাদের মধ্যে ডিসিপ্লিনের অনেক অভাব আছে। তোমরা জ্ঞানীদের কথা মন দিয়ে শুনতে চাও না। আমরা যখন ছাত্র ছিলাম আমাদের যদি কোনো সিনিয়র স্যার ক্লাস নিবে জানতাম আমরা অনেক আগ্রহ নিয়ে সেই স্যারের ক্লাস করতাম
নূর আলী বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই যদি কোনো শিক্ষক এই বিদ্যালয়ে থেকে শিক্ষার্থীদের ভালোভাবে পড়াতে না পারেন তাহলে ওই শিক্ষককে এই বিদ্যালয় থেকে চলে যেতে হবে। ছাত্রদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা চলবে না। আপনি শুধু ছাত্রদের কাছে চাইবেন আপনি ছাত্রদের কিছু দিবেন না তা হবে না।
বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও শতবর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানের সদস্য সচিব সেলিম খানের সভাপতিত্বে এসময় পরমানু বিজ্ঞানী ফয়েজ আল সিদ্দিকী, আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য আব্দুল বাতেন মিয়া, সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি ড. খন্দকার আবুল কালাম, শতবর্ষ উদযাপন কমিটির যুগ্ম আহবায়ক মোজাহার আলী শোভা, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মো. শহিদুল্লা খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শহিদুল ইসলাম, তারিণী বামা উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক বীরমুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমান ফকু, বাংলাদেশ সোসাইটি ফর হিউম্যন রিসোর্স ম্যানেজম্যান্ট মো. মশিকুর রহমান খান, হেড অফ নিউজ একাত্তর টিভি শাকিল আহমেদ, পূবালী ব্যাংকের সাবেক জেনারেল ম্যানেজার আজহার হোসেন খান, কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও শতবর্ষ উদযাপন কমিটির যুগ্ম আহবায়ক মোয়াজ্জেম হোসেন, গুলশান জগার্স ক্লাবের আইন বিষয়ক সম্পাদক আহম জাহাঙ্গীর হোসেন পাটুয়ারী, কার্যকরী পরিষদ সদস্য মো. তুহিন, চুড়াইন ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল বেপারী, সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার ভুইয়া, চুড়াইন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাব্বির হোসেন বাদল, অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অরুন চন্দ্র মন্ডল, জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য এসএম সাইফুল ইসলামসহ বিদ্যালয়ের অনেক প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীরা উপস্থিত ছিলেন।