ডেস্ক : চলতি অর্থবছরে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের (জুলাই-মার্চ) ৯ মাসে নিট ঋণ দেড় হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। যদিও পুরো অর্থবছরে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ছিল ৮২ হাজার কোটি টাকা। অন্যদিকে একই সময়ে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার ধার করেছে ৮৬ হাজার কোটি টাকা। যদিও এ ধারের লক্ষ্য ছিল ২০ হাজার কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংক ঋণে লক্ষ্যের ধারেকাছে না থাকলেও সঞ্চয়পত্রে লক্ষ্য অতিক্রম করে চলে গেছে বহুদূর।
২০১৯-২০ অর্থবছরে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ৭২ হাজার ২৪৬ কোটি টাকার রেকর্ড পরিমাণ ঋণ নিয়েছিল সরকার। ফলে গত জুন শেষে ব্যাংক খাতে সরকারের মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ লাখ ৭৭ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা। করোনার প্রভাবে রাজস্ব আয় কমে যাওয়ার আশঙ্কাসহ নানা কারণে চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকার নিট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করে সরকার। তবে ঋণের চাহিদা কম থাকায় এ লক্ষ্য থেকে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা কাটছাঁট করে ৮২ হাজার টাকার লক্ষ্য ঠিক করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, অর্থবছরের শুরু থেকে ৫ মে পর্যন্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকার ঋণ নিয়েছে ৩০ হাজার ১৮২ কোটি টাকা। তবে এ সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনো ঋণ নেয়নি সরকার। উলটো আগের নেওয়া ঋণের ২৮ হাজার ৫৪৬ কোটি টাকা শোধ দিয়েছে। এতে চলতি অর্থবছরে ৫ মে পর্যন্ত সরকারের নিট ব্যাংক ঋণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬৩৬ কোটি টাকা। যেখানে পুরো অর্থবছরে সরকারের প্রায় ৮৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার কথা।
জানতে চাইলে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ও ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, সুদহার বেশি হওয়ায় সঞ্চয়পত্রের দিকে ঝুঁকছে মানুষ। এতে সরকারের সুদ বাবদ ব্যয় অনেক বেড়ে যাচ্ছে। ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে এমনটি হতো না। এখন যদি সরকার জেনেশুনে বিষপান করতে চায়, তাহলে কারও কিছু করার নেই। ঋণ বেড়ে গেলে ব্যাংক খাতের ওপর তেমন চাপ আসবে না জানিয়ে অর্থনীতির এ গবেষক বলেন, চলমান পরিস্থিতিতে সরকার ব্যাংক থেকে যে অঙ্কের ঋণ নেবে তাতে তেমন চাপ পড়বে না। আর যদি চাপ মনে হয়, তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকার ঋণ নিয়ে ট্রেজারি বিল ইস্যু করে দেবে; বাজারে প্রভাব পড়বে না। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রথম নয় মাসেই (জুলাই-মার্চ) সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৮৫ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা।
আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল ৫২ হাজার ৯৬৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা শোধ করা হয়। সে হিসাবে নিট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ২০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। কিন্তু চলতি অর্থবছরে সরকারের সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয় ২০ হাজার কোটি টাকা।
এদিকে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে অর্ধেকও বাস্তবায়ন হয়নি এডিপি। এপ্রিল পর্যন্ত এডিপির বাস্তবায়ন হয়েছে ৪৯ দশমিক ০৯ শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে এডিপি বাস্তবায়নের এ হার ছিল ৪৯ দশমিক ১৩ শতাংশ।
জ্যেষ্ঠ ব্যাংকার আনিস এ খান বলেন, এখানে ডিমান্ড অ্যান্ড সাপ্লাইয়ের বিষয়। সঞ্চয়পত্রের ডিমান্ড বেশি, তাই বিক্রিও বেশি হয়েছে। আর ব্যাংক ঋণ সাপ্লাইয়ের প্রয়োজন কম ছিল, তাই ব্যাংক ঋণ গেছেও কম। স্বাভাবিক নিয়মেই সবকিছু হয়েছে বলে জানান তিনি।
অপর এক জ্যেষ্ঠ ব্যাংকার বলেন, ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকার যে ঋণ কম নিয়েছে, তা সঠিক। কারণ ব্যাংকে সাময়িকভাবে তারল্য বেশি দেখলেও বিনিয়োগ শুরু হলে এটা থাকবে না। সে হিসাবে ব্যাংক ঋণ থেকে সরকারের বের হওয়াটা একটা ইতিবাচক উদ্যোগ।