ইমরান খান রাজ (স্টাফ রিপোর্টার) মহামারি করোনাভাইরাসে যখন সারাদেশ আতঙ্কিত, ভীতসন্ত্রস্ত, দুশ্চিন্তায় মগ্ন ঠিক তখনি অত্যন্ত সাহসীকতার পরিচয় দিয়েছে ঢাকা জেলার দোহার উপজেলার স্বেচ্ছাসেবীরা। করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে কেউ মৃত্যুবরণ করলে সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা নিজের ছেলেমেয়ে, ভাইবোন বা আত্নীয়স্বজন কেউ সেই লাশের সামনে আসতে চাইতেন না ভয়ে ! অথচ সকল ভয়কে পেছনে ফেলে, নিজের জীবন বাজি রেখে নামমাত্র নিরাপত্তা সরঞ্জাম পরিধান করে ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ, দোহার উপজেলা শাখার স্বেচ্ছাসেবীরা করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত ব্যক্তিদের জানাজা ও দাফন সম্পন্ন করতেন। মোট ১১জন সদস্য নিয়ে তাঁদের টিম গঠিত হয়৷ শুরুর দিকে অল্প কয়েকজনে কাজে অংশ নিলেও ধীরে ধীরে তাঁদের টিম এখন ১১জনে পূর্ণ হয়।
ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ দোহার উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও স্বেচ্ছাসেবী টিম লিডার মো. সোলাইমান বেপারি জানায়, আমাদের টিমের সকল স্বেচ্ছাসেবী ভাইয়েরা নিজেকে করোনা ঝুঁকিতে রেখে প্রতিনিয়ত মানবসেবামূলক কাজ করে যাচ্ছে। দোহারের ঝনকি, খড়িয়া, সুতারপাড়া, ঘোনা, বিলাশপুর, পশ্চিমচরসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত মোট ১২জনকে এখন পর্যন্ত জানাজা ও দাফন করেছে স্বেচ্ছাসেবী টিম৷ যতদিন বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ থাকবে ততোদিন দোহার উপজেলার করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত ব্যক্তিদের দাফনকাজ সম্পন্ন করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি৷
স্বেচ্ছাসেবী টিমের সদস্য মাওলানা ইসমাইল বিন খলিল তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নিয়ে বলতে গিয়ে বলেন, আমরা ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ দোহার উপজেলা শাখার স্বেচ্ছাসেবী টিমের যারা সদস্য রয়েছি তাঁরা একটি মাত্র ফোন পেয়ে সাথে সাথে বাসা থেকে বেড়িয়ে লাশ দাফনের কাজে যুক্ত হয়েছি। শুরুর দিকে কয়েকটি দাফন কার্যে দোহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে আমাদেরকে মাস্ক, পিপিই, হ্যান্ড গ্লাভস দেওয়া হলেও পরবর্তী সকল দাফন কার্য নিজেদের অর্থায়নে নিরাপত্তা সরঞ্জাম ক্রয় ও যাতায়াত খরচ বহন করেছি। কখনো বৃষ্টিতে ভিজে আবার কখনো প্রখর রোদে আবার কখনো মধ্যরাতে আমরা করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত ব্যক্তিদের জানাজা ও দাফন কার্য সম্পাদক করেছি।
ঢাকার দোহার উপজেলার সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী উপজেলায় মোট করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৫১৭জন। যাদের মধ্য থেকে সুস্থ হয়েছেন ৪৩৬ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছে ৮জন৷ বাড়িতে ও হাসপাতালে মিলে আইসোলেশনে রয়েছে মোট ৭২ জন৷ এ উপজেলায় সর্বমোট ২৮০৪টি নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করা হয়৷
স্বেচ্ছাসেবী টিমের অন্যতম সদস্য ও নারিশা ইব্রাহীমিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা যুবায়ের আহমাদ সাকী জানায়, মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। মানুষের কল্যাণে কাজ করলে আল্লাহ খুশি হয়। এই চিন্তা থেকে এবং ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশনায় আমরা দোহার উপজেলার করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত ব্যক্তিদের দাফনকাজের উদ্যোগ গ্রহণ করি৷ শুরুর দিকে দাফন কার্য সম্পাদন করতে আমরা মৃত ব্যক্তির পারিবারিক কোনো সহযোগিতা পায়নি। এমনকি কোনো এক এলাকায় করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত ব্যক্তির লাশ নিয়ে যেতেও বাধার সম্মুখীন হয়েছি৷ অনেক বাধা, ত্যাগ আর অক্লান্ত পরিশ্রম সহ্য করে আমাদের স্বেচ্ছাসেবী টিম দাফনকাজ সম্পন্ন করে। এই কাজে যুক্ত হবার পর থেকে অনেকের কাছে থেকে প্রশংসা, সম্মান ও সামনে এগিয়ে যাবার প্রেরণা পেয়েছেন বলেও জানান তিনি।
করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মৃত ব্যক্তিদের দাফনকাজ সম্পন্ন করার জন্য যেই স্বেচ্ছাসেবী টিম গঠিত করা হয় তাঁদের মধ্যে রয়েছেন মো. সুলাইমান বেপারী, মাওলানা আব্দুল গফফার আল ফরিদী, হাফেজ মো. ইসমাইল, আলহাজ্ব শহিদুল ইসলাম ভূইয়া, মাওলানা যুবায়ের আহমাদ সাকী, হাফেজ মাওলানা ওমর ফারুক, মাওলানা ইসমাইল বিন খলিল, মোহাম্মদ শিবলু, মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক, মুহাম্মাদ আমির হোসেন, মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান।
করোনাভাইরাস মানবজীবনের এক কালো অধ্যায় হিসেবে আবির্ভাব ঘটে। ২০২০ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী সনাক্ত করা হয়। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে সারে তিন লাখের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে এবং পাঁচ হাজারের বেশি বাঙালি করোনায় মৃত্যুবরণ করেছে। সৃষ্টিকর্তার কাছে আমাদের সকলের প্রার্থনা থাকবে, বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বের সকল দেশ যেনো করোনাভাইরাস মুক্ত হয়।


Reporter Name 


















































































































































































































































































































































































































































































































































































































































































































































































































































































































































































































































































































































































































































































































































































































































































































































































































































































































































































































































































































































































































































































































































































































































































































































































































































































































































