ডেস্ক : শিশু ধর্ষণের অভিযোগে চার শিশুকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ওই ঘটনায় বাকেরগঞ্জ থানার ওসি রফিকুল ইসলাম ও দুই এসআইকে সাময়িক বরখাস্ত করে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইজিপিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ওই চার শিশুকে প্রিজনভ্যানে তোলার অপরাধে আরও চার পুলিশ সদস্যকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধেও বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এ সংক্রান্ত মামলার রুল যথাযথ ঘোষণা করে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কামরুল হোসেন মোল্লার ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ রোববার এ রায় দেন। আদালতের এই আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল গোলাম সারোয়ার পায়েল।
তিনি বলেন, রায়ে চার শিশুকে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. এনায়েতউল্লাহর ফৌজদারি মামলার বিচারিক এখতিয়ার প্রত্যাহার করে নিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের জিএ কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে তাকে দেওয়ানি মামলা পরিচালনার এখতিয়ার দিতে বলা হয়েছে।
রায়ে আদালত বলেছেন, শিশু আইনে পুলিশ কর্মকর্তা ও বিচারকদের শিশুর অধিকার রক্ষায় দায়িত্ব পালনের জন্য যে নির্দেশনা রয়েছে তারা তা পালন করেননি। যদি তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়া হয় তাহলে এ ধরনের ঘটনা বাড়তেই থাকবে। তাই জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও তিন পুলিশ সদস্যের নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন নাকচ করে এই নির্দেশনা দেওয়া হলো। রায়ে হাইকোর্ট শিশুদের গ্রেফতার ও তাদের আটকাদেশকে অবৈধ ঘোষণা করেছে। এই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে করা মামলাকে বেআইনি ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট।
রায়ে হাইকোর্ট দেশের সকল থানায় শিশুবান্ধব পুলিশ কর্মকর্তা নিয়োগ, শিশু ডেস্ক স্থাপন এবং শিশুদের অধিকার রক্ষায় যে ধরণের নির্দেশনা রয়েছে তা থানায় টাঙানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গণমাধ্যমে প্রচারিত প্রতিবেদন প্রচারের পর গত বছরের ৮ অক্টোবর রাতে কোর্ট বসিয়ে ৪ শিশুকে মুক্তির আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ৬ বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার ৮ থেকে ৯ বছরের ৪ শিশু। প্রিজন ভ্যানে তোলার সময় তাদের বুকফাটা কান্না এবং কারাগারে পাঠানো নিয়ে প্রতিবেদন প্রচার করে একটি টেলিভিশন। এ প্রতিবেদন দেখে রাতেই বসে উচ্চ আদালত। আদেশ দেওয়া হয় দ্রুত মুক্তির। পরদিন ৯ অক্টোবর শিশুদের ফিরিয়ে দেওয়া হয় মায়ের কোলে। কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয় বাকেরগঞ্জ থানা পুলিশকে। ভুল স্বীকার করে বিচারক ও পুলিশ কর্মকর্তা উচ্চ আদালতে ক্ষমা চান। রোববার এ মামলার চূড়ান্ত রায় দিলেন হাইকোর্ট।