সত্যবাদিতা অত্যন্ত মহৎ একটি গুণ, যা মানুষকে কল্যাণের পথ দেখায়। মহানবি (সা.) তাঁর উম্মতকে সত্যবাদী হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। কারণ সত্যই মানুষকে চূড়ান্ত সফলতা এনে দেয়, আর মিথ্যা মানুষকে মরীচিকার বেড়াজালে আটকে ধ্বংস করে দেয়। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বর্ণনা করেন, প্রিয় নবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই সত্যবাদিতা কল্যাণের দিকে পথনির্দেশ করে। আর কল্যাণ ব্যক্তিকে জান্নাতের পথে পরিচালিত করে। একজন ব্যক্তি সত্য বলতে অভ্যস্ত হয়ে যায়। এভাবে সে আল্লাহর কাছে সত্যবাদীরূপে পরিগণিত হয়। পক্ষান্তরে মিথ্যা অকল্যাণের দিকে আহ্বান করে। আর গুনাহ ব্যক্তিকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়। কোনো ব্যক্তি মিথ্যায় অভ্যস্ত হয়ে আল্লাহর দরবারে মিথ্যুক হিসেবে পরিগণিত হয়ে যায়।’ (বুখারি : ১০/৬০৭৯, মুসলিম : ৪/১০৩)
হাদিসের বার্তা দ্বারা স্পষ্ট হয় যে সত্যবাদিতা কল্যাণের পথনির্দেশক। একজন সত্যবাদী মানুষ সর্বক্ষেত্রেই প্রশংসিত। তাই পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা, আল্লাহকে ভয় করো এবং তোমরা সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকো।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ১১৯)
হাফেজ ইবনে কাসির (রহ.) এই আয়াতের তাফসিরে উল্লেখ করেন, আয়াতের বার্তা হচ্ছে, ‘তোমরা সত্যবাদিতাকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরো। সত্যবাদীদের সান্নিধ্য অবলম্বনে যত্নবান হও। এতে তোমরা ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পাবে। আল্লাহ তোমাদের কাজ সহজ করে দেবেন। তোমাদের জন্য উন্নতির দ্বার উন্মুক্ত করে দেবেন।’ (তাফসিরুল কুরআনিল আজিম : ২/৪৯০ দারুল হাদিস, কায়রো মিসরের সংস্করণ)। অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা, আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্য-সঠিক কথা বলো। তাহলে আল্লাহ তোমাদের কার্যাবলি শুধরে দেবেন এবং তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করে, সে মহা সাফল্য অর্জন করে।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৭০-৭১)
এই দুই আয়াতের ব্যাখ্যায় হাফেজ ইবনে কাসির (রহ.) তাঁর তাফসিরগ্রন্থে বলেন, ‘যারা সত্য কথা বলবে আল্লাহ তাদের সব কাজ সংশোধন করে দেবেন। তাদের প্রতিটি কাজ হবে গোছালো। আল্লাহ সত্যবাদীদের বেশি পরিমাণে নেক কাজের তাওফিক দান করেন। তাদের অতীত গুনাহ ক্ষমা করে দেন। ভবিষ্যতে কোনো গুনাহ সংঘটিত হয়ে গেলে তাওবার সুযোগ করে দেন।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির : ৩/৬৩৫)
সত্যবাদী ব্যক্তি আত্মমর্যাদাশীল হয়। ফলে সে বহু অনৈতিক ও অন্যায় কাজ থেকে অনায়াসে বেঁচে থাকে। একজন সত্যবাদীর জীবন হয় ফুলের মতো সৌরভময়। ফুল যেমন তার হৃদয়কাড়া সুরভী দিয়ে চারপাশটা মোহিত করে রাখে, তদ্রুপ সত্যবাদী মানুষ সত্যবাদিতার সৌরভ ছড়িয়ে পরিবার ও সমাজকে মোহিত করে রাখে। এভাবে সে দুনিয়ায় মানুষের কাছে এবং আখিরাতে স্রষ্টার কাছে সম্মানজনক জীবন লাভে ধন্য হয়।
লেখক : আব্দুল্লাহ আলমামুন আশরাফী খতিব, আউচপাড়া জামে মসজিদ, টঙ্গী, গাজীপুর।