ডেস্ক রিপোর্ট : বহুদিন পর ছাত্রছাত্রীরা তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরবে। খুলবে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়ের দরজা। শিক্ষার্থীদের এই আগমন সুন্দর হোক, শুভ হোক, স্বাস্থ্যসম্মত হোক, নিরাপদ হোক। প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থী ও তাদের বাবা-মা-অভিভাবকদের অপেক্ষার অবসান ঘটবে।
দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গত বছরের ১৭ মার্চ বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। সেই থেকে এ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ক্লাসে যায়নি। খুব কম দেশই এত দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে। করোনার কারণে কলকারখানা বন্ধ রাখার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয়ের চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি সময় ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষাগত, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও আর্থিক কী ক্ষতি হয়েছে, তা নিরূপণের কোনো উদ্যোগের কথা জানা যায়নি।
জাতিসংঘ শিশু তহবিল বা ইউনিসেফ গত ১২ জুলাই বলেছিল, স্কুল খুলতে হবে। করোনা সংক্রমণ শূন্যে নামা পর্যন্ত অপেক্ষা করা যাবে না। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষেত্রে ঝুঁকির দিক দিয়ে প্রথম কাতারে নেই, এমন স্পষ্ট প্রমাণ আছে। ওই তারিখ (১২ জুলাই) পর্যন্ত ১৯টি দেশের স্কুল বন্ধ ছিল। সেই তালিকায় বাংলাদেশ ছিল। এখনো আছে। থাকবে আরও কিছুদিন।
যদিও স্কুল খোলার বিষয়ে কয়েক মাস ধরেই আলোচনা চলছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ১৩ সেপ্টেম্বর বা তার কাছাকাছি সময়ে মেডিকেল কলেজগুলো খুলে দেওয়া হবে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীরা যাতে নিরুদ্বিগ্ন চিত্তে আসে, সে ব্যবস্থা দরকার; অন্যদিকে মহামারির মধ্যে সন্তানকে স্কুলে রেখে অভিভাবকদের
উৎকণ্ঠা বেড়ে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে ভারসাম্য দরকার। এই ভারসাম্য আনার দায়িত্ব একা সরকারের নয়, একা শিক্ষা বা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নয়, দায়িত্বটি গোটা জাতির।
জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, আগে স্বাস্থ্য, পরে শিক্ষা। এত কাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল সংক্রমণের কারণে। স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা–বিশ্ববিদ্যালয় খোলার আগে সংক্রমণ প্রতিরোধেই জোর দিতে হবে। প্রাক্-স্কুল, প্রাথমিক স্কুল, মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বয়স ও আচরণে পার্থক্য আছে। সর্বজনীন ব্যবস্থার পাশাপাশি প্রত্যেকের জন্য পৃথক পৃথক বিধিবিধান করতে হবে। যা–ই করা হোক না কেন, তা শিক্ষার্থীদের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। গ্রহণযোগ্য না হলে তারা তা মানবে না। বিধি লঙ্ঘন করলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়বে।