ঢাকার দোহার উপজেলার ধীৎপুর এলাকায় চাঞ্চল্যকর একই পরিবারের ৫ জনকে বাড়িতে তালাবদ্ধ করে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টার ঘটনায় মূল পরিকল্পনাকারী মো. রুবেল (২১) ও তার প্রধান সহযোগী মো. রানা মাহমুদ (২৪) কে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১০। শুক্রবার দুপুরে মুন্সিগঞ্জের বালাশুরে র্যাব ক্যাম্পে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করেন র্যাব ১০ এর কোম্পানী কমান্ডার এএসপি-এ, কে এম কাউসার চৌধুরী। গ্রেফতারকৃত রুবেল ধীৎপুর এলাকার সুলতান শেখ এর ছেলে ও অপর আসামি রানা একই এলাকার নুরু শেখের ছেলে। র্যাব জানায় এই ঘটনার সাথে জরিত বাকি আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।
র্যাব জানা যায়, গ্রেফতারকৃত রুবেল পেশায় একজন চালের টিনের মিস্ত্রি। সে ভিকটিম জুলহাসের বাড়িতে থাকতো। রুবেল অত্যান্ত দুস্ট প্রকৃতির লোক ছিল, তার কথাবার্তা ও চালচলন জুলহাস উদ্দিনের কাছে অপছন্দ হওয়ায় বিগত ১৩-১৪ দিন পূর্বে রুবেলকে তাদের বাসা থেকে চলে যেতে বলে।
পরবর্তীতে রুবেল বাসা ছেড়ে দেওয়ার বিষয়কে কেন্দ্র করে জুলহাসের সাথে বাকবিতন্ডায় জড়ায় এবং একপর্যায় রুবেল জুলহাসকে দেখে নেয়ার হুমকি দিয়ে বাসা থেকে চলে যায়।
ঘটনার সূত্রধরে গত ১৬ জানুয়ারি মঙ্গলবার মাঝরাতে জুলহাস উদ্দিন শেখ (৪৮), তার স্ত্রী ফাহিমা আক্তার (৩৫), মেয়ে জান্নাত (১২), ছেলে জুনায়েদ (০৯) ও ভাতিজি তাবাসসুম (০৯) উল্লেখিত একই পরিবারের ০৫ জনকে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা হত্যার উদ্দেশ্যে জুলহাস উদ্দিনের বসবাসরত বাড়ীতে (টিনসেড বিল্ডিং) বাহির হতে তালাবদ্ধ করে বাড়ীর চতুর্দিকে পেট্রোল ঢেলে আগুন জালিয়ে দেয়। তার কিছুক্ষণ পর আগুনের তাপে ও আশবাবপত্র পুড়ার বিকট শব্দে জুলহাস উদ্দিন ও তার পরিবারের সদস্যরা ঘুম থেকে উঠে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। ভিকটিমরা তাদের প্রাণ বাচাতে ও আসবাবপত্র রক্ষা করার জন্য এদিক-ওদিক ছুটাছুটি করে এবং দরজা খুলার চেষ্টা করে করতে থাকে। অতঃপর কোনভাবে দরজা খুলতে না পেরে বাথরুমের ভেন্টিলেটর দিয়ে ডাক-চিৎকার করতে থাকে। ডাক-চিৎকারের এক পর্যায় জুলহাস উদ্দিনের ছোট ভাই মুক্তার হোসেন @মুকাত (৩৮) ও আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে বাথরুমের দেওয়াল ভেঙ্গে জুলহাস উদ্দিনসহ তাদের পরিবারের সবাইকে উদ্ধার করে। এসময় জুলহাস উদ্দিন ও তার স্ত্রী ফাহিমা আক্তারের মুখ-মন্ডল, হাতসহ শরীরের বিভিন্ন স্থান আগুনে ঝলসে যায়।
আগুনের ধোয়ার কারনে জুলহাস উদ্দিনের মেয়ে, ছেলে ও ভাতিজির শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত সমস্যা দেখা দেয় এবং তাদের ঘরে থাকা ফ্রিজ, টিভিসহ আনুমানিক ৩,০০,০০০/- (তিন লক্ষ) টাকা মূল্যমানের অন্যান্য আসবাবপত্র উক্ত আগুনে পুড়ে যায়। ভিকটিমদের উদ্ধার করার সাথে সাথে জুলহাস উদ্দিনের ছোটভাই ও স্থানীয় লোকজন দোহার থানা পুলিশ ও দোহার উপজেলা ফায়ার সার্ভিসকে সংবাদ দিলে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। পরবর্তীতে জুলহাস উদ্দিনের ছোটভাই স্থানীয় লোকজনদের সহযোগীতায় জুলহাস উদ্দিনসহ তার পরিবারের আহত সবাইকে চিকিৎসার জন্য দোহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে রেফার্ড করেন।
পরদিন মামলা রুজুর পর থেকে সে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে ছিলো । ১৮ জানুয়ারি রাত ৮টার দিকে র্যাব-১০ এর আভিযানিক দল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে, তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমেসহায়তা এবং র্যাব-০৪ এর সহযোগীতায় রাজধানী ঢাকার আশুলিয়া এলাকায় যৌথ অভিযান পরিচালনা করে মূল পরিকল্পনাকারী মোঃ রুবেল কে গ্রেফতার করে তার দেয়া তথ্যমতে দোহারের ধীৎপুর প্রধান সহযোগী মোঃ রানা মাহমুদকে গ্রেফতার করেন।