রসায়নের ভাষায় ভিটামিন-সি এর নাম হলো অ্যাসকরবিক অ্যাসিড। এটি একটি অম্লধর্মী জৈব যৌগ ও সাদা দানাদার পদার্থ। যা শাকসবজি ও টক ফলমূলে বেশি পাওয়া যায়। মানুষসহ বিভিন্ন প্রাণী ও উদ্ভিদের জন্য এটি একটি প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান।
‘ভিটামিন-সি’ দ্বারা মূলত এর একাধিক ভিটামারকে বোঝানো হয়। যেগুলো প্রাণী ও উদ্ভিদের দেহে ভিটামিন-সি এর মতোই কাজ করে। এসব ভিটামারের মধ্যে অ্যাসকরবিক অ্যাসিডসহ এর বিভিন্ন লবণ এবং ডিহাইড্রোঅ্যাসকরবিক অ্যাসিডের মতো কিছু জারিত যৌগও বিদ্যমান।
এর ঘাটতি হলে দেখা দিতে পারে স্কার্ভি এর মতো রোগ। স্কার্ভি এর প্রাথমিক উপসর্গের মধ্যে আছে অসুস্থতা বোধ, ক্লান্তিবোধ, অবসন্নতা ও তন্দ্রা। এক থেকে তিন মাস পরে রোগীর অস্থিব্যথা ও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। কারনিটিন উৎপাদন কমে যাওয়ার জন্য মানংসপেশিতে ব্যথাও হতে পারে।
স্কার্ভির অন্যান্য লক্ষণের মধ্যে অন্যতম হলো ত্বক খসখসে হয়ে যাওয়া, ত্বকে সহজে কালশিটে পড়া ও লাল বিন্দুর মতো ফুসকুড়ি দেখা দেওয়া, মাড়ি থেকে রক্তপাত, দাঁত ঢিলা হয়ে যাওয়া, শরীরে লৌহের শোষণ কমিয়ে রক্তশূণ্যতা তৈরি করা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বিপর্যস্ত করে ফেলা, ক্ষত নিরাময়ে বিলম্ব হওয়া, বিরক্তিভাব ও মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া, চোখ ও মুখ শুষ্ক হয়ে যাওয়া প্রভৃতি।
শেষ পর্যায়ে জন্ডিস, সমস্ত শরীর ফুলে যাওয়া, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া, স্নায়ুরোগ, জ্বর, খিঁচুনি এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। বিগত কয়েক শতাব্দী পূর্বেই জাহাজে অবস্থানরত নাবিকেরা মুখে ঘা, ত্বকের রক্তক্ষরণ, ক্ষতস্থানের ধীরগতিতে নিরাময়সহ বিভিন্ন উপসর্গে ভুগেছিলেন। এর ফলে অনেকের মৃত্যু ঘটে।
মধ্যযুগীয় ইউরোপীয় ধর্মযুদ্ধের ইতিহাসে নাবিকদের এ রোগে ভোগার ও মৃত্যুর হার ছিল ব্যাপক। কুলম্বের আটলান্টিক সমুদ্রযাত্রা ও স্টিম ইঞ্জিন উৎপত্তির মাঝামাঝি সময়ে প্রায় ২ মিলিয়ন নাবিক এ রোগে ভুগেছিলেন বলে প্রমাণ আছে। বিশ্ববিখ্যাত পর্যটক ভাস্কো- ডা-গামা, ম্যাগালান, জর্জ অ্যানসন প্রমুখও এ রোগের কবল থেকে রেহাই পাননি।
আবার প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভিটামিন সি গ্রহণ করলে ক্ষেত্রবিশেষে ডায়রিয়া, বমি বমি ভাব হওয়া বা বমি হওয়া, বুক জ্বালাপোড়া করা, তলপেটে অতিমাত্রায় ব্যথা হওয়া, মাথাব্যথা, অনিদ্রা প্রভৃতিও দেখা দিতে পারে।
এজন্য চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ভিটামিন সি সহ অন্য যেকোনো সাপ্লিমেন্ট কোনোভাবেই সেবন করা উচিত না। তাই করোনা মহামারির এই সময়ে চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন এবং প্রয়োজনে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করে নিজেকে ও পরিবারকে সুরক্ষিত রাখুন।