নিজস্ব প্রতিবেদক: মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার নয়নশ্রী ইউনিয়নের দেওতলায় ইছামতি নদীতে নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে দেওতলা নবারুণ সংঘের উদ্যোগে এই নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হয়।
নৌকা বাইচে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান এমপি। তিনি নদীতে স্পিডবোটে কিছু সময়ের জন্য নৌকা বাইচ দেখেন। এ সময় তিনি নদীর দু’পাশে থাকা এলাকাবাসীক হাত নেড়ে অভিবাদন জানান।
বিশেষ অতিথি ছিলেন দোহার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আলমগীর হোসেন ও নবাবগঞ্জ নবাবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন আহমেদ ঝিলু। নৌকা বাইচ উপলক্ষে ইছামতি নদীর দুই পাড়ে শিশু-নারী-পুরুষসহ উপস্থিত ছিল হাজার হাজার মানুষ।
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা ও ঢাকা-১ আসনের সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমান বলেন, ‘এই করোনাকালেও দোহার নবাবগঞ্জের উন্নয়ন হয়েছে। কথা দিয়েছি দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলাকে মডেল উপজেলায় রুপান্তর করবো। উন্নয়নে যা যা, কথা দিয়েছি বাস্তবায়ন করব। আমরা মহামারী কাটিয়েছি। এই মহামারী কাটিয়ে আবার অর্থনীতির চাকা সচল হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বে করোনাকালেও দেশের উন্নয়ন অব্যাহত ছিল। আমাদের দোহার নবাবগঞ্জেও উন্নয়ন হয়েছে। ‘
বাইচ উপলক্ষে এলাকাজুড়ে উৎসবের আমেজ ছিল। ইছামতি দুপাড় সাজানো হয়েছিল বর্ণিল সাজে। বাংলাদেশ ও পাকিস্তান জন্মের আগ থেকেই এ অঞ্চলে বাংলা সনের ভাদ্র মাসে মাসব্যাপী নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তবে করোনার কারণে দু’বছর পর এবার বাংলা সনের আশ্বিন মাসে এ আয়োজন করা হয়। এখন নদীতে পানি না থাকার কারণে মাসব্যাপী আর নৌকা বাইচ হয় না। তারপরও ইছামতি নদীর কমপক্ষে ৮/১০ পয়েন্টে নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হয়। এবারের সবচেয়ে বড় নৌকা বাইচের আয়োজন ছিল এটি।
বাইচ শেষ দেওতলা নবারুণ সংঘ ও নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার সভাপতি মো. মাসুদ মোল্লার সভাপতিত্বে বিতরণী অনুষ্ঠান করা হয়। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় নেতাকর্মীরা নদীর আগের যৌবন ফিরিয়ে আনার জন্য ড্রেজিং এবং ইছামতি-পদ্মা নদীর সংযোগস্থলে সুইচগেট নির্মাণের দাবি জানান।
নৌকাবাইচ ঐতিহ্য রক্ষা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রাশিম মোল্লা বলেন, নবাবগঞ্জে কয়েক শত বছরের ঐতিহ্য নৌকা বাইচ। কিন্তু বিগত বেশ কিছু বছর ধরে নদীতে পানি না থাকায় ঐতিহ্য কিছুটা ভাটা পড়েছে। পানি না থাকার কারণে শুধু এ ঐতিহ্যই ভাটা পড়েনি। নদী নির্ভর জেলে সম্প্রদায়কে জীবিকা নির্বাহ করতে কষ্ট সাধ্য হয়ে উঠেছে। আর এ সমস্যার সমাধানে প্রয়োজন পদ্মা নদীর সাথে মতি নদীর সংযোগ করে সোনাবাজু বেরি বাদে সুইচগেট নির্মাণ।
সূত্র জানায়, এক সময় ঢাকার নবাবগঞ্জে ভাদ্র মাস এলেই শুরু হতো গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ। পুরো এক মাসব্যাপী ইছামতি নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে এলাকাবাসীর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হতো এ নৌকা বাইচ। পুরো উপজেলায় উৎসবের আমেজ বিরাজ করতো। প্রতিটি বাসায় পিঠা-পুলি বানানোর ধুম পড়ে যেতো। বিশেষ করে তাল দিয়ে বানানো পোয়া পিঠা সবার বাড়িতে ছিল বাধ্যতামূলক। বিকাল হলে দাদা, নানা, চাচাদের সঙ্গে বাইচ দেখতে ছোট্ট ছেলে মেয়েরাও বায়না ধরতো। বাধ্য হয়ে ডিঙ্গি নৌকা ও ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে তাদেরকে নিয়ে নৌকা বাইচ দেখতে যেতেন। অনেক পরিবারে আবার বাড়ির সবাই মিলে নৌকা বাইচ দেখতে হাজির হতো।
এ ব্যাপারে দেওতলা নবারুণ সংঘের সভাপতি মো. মাসুদ মোল্লা বলেন, গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য প্রতিবছরই গ্রামবাসীর সহায়তায় অনেক কষ্ট করে নৌকা বাইচের আয়োজন করি। কিন্তু গত দুই বছর মহামারি করোনার কারণে আমরা এ আয়োজন থেকে বিরত ছিলাম। তবে এ বছর করোনার প্রাদুর্ভাব কম থাকায় সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনুমতি সাপেক্ষে নৌকা বাইচের আয়োজন করেছি।
তিনি আরও বলেন, নবাবগঞ্জে নৌকা বাইচের ঐতিহ্য কয়েকশো বছরের। কিন্তু গত ১০/১২ বছর ধরে এ ঐতিহ্যে ভাটা পড়েছে। এর মূল কারণ বর্ষা মৌসুমে ইছামতি নদীতে এখন আর সেই আগের মতো পর্যাপ্ত পানি থাকে না। নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে কচুরিপানায় ভরপুর থাকে। এতকিছুর পরেও এলাকাবাসী কচুরিপানা অবমুক্ত করে ইছামতি নদীর কোনো না কোনো পয়েন্টে নৌকা বাইচের আয়োজন করেন। বিশেষ করে উপজেলার দেওতলা, রাধাকান্তপুর- চক খানেপুর, কান্দা খানেপুর গ্রামবাসী।
বাইচ শেষে প্রতিযোগিদের মাঝে প্রথম পুরস্কার মোটরসাইকেল দ্বিতীয় ও তৃতীয় হিসেবে ফ্রিজসহ আরও সান্ত্বনা পুরস্কার প্রদান করা হয়।