দোহার-নবাবগঞ্জ(ঢাকা) প্রতিনিধি: ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে বালুবাহী ড্রামট্রাক চাপায় কলেজ শিক্ষক নিহতের ঘটনায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করা হয়েছে। রবিবার মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার খাহ্রা আদর্শ ডিগ্রি কলেজের সামনে কলেজ শিক্ষক ও কয়েক শতাধিক শিক্ষার্থীরা এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করে। বিক্ষোভ মিছিলটি এলাকার বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ কওে কলেজ প্রাঙ্গণে ফিওে আসে।
এ মানববন্ধন অনুষ্ঠানে খাহ্রা আদর্শ কলেজের অধ্যক্ষ আজিজুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মামলার কয়েক দিন পার হলেও এখন পর্যন্ত পুলিশ ঘাতক গাড়ী চালককে ধরতে পারেনি। এভাবে সড়কে গাড়ি চালিয়ে বাবা মা, আত্মীয় স্বজনের বুক খালি করবে তা হতে দেওয়া যাবে না। যত দ্রুত সম্ভব ঘাতক গাড়ী চালককে ধরে আইনের আওতায় আনতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা মানববন্ধন অনুষ্ঠান শেষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর মামলার কপি জমা দিবো। এতে যদি মামলার কোন অগ্রগতি না হয় আমরা শিক্ষার্থীদের নিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করতে বাধ্য হবো।
একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ইডিসন সরকার ও হাছিন শাদাব ইনান বলেন, আমাদের স্যারকে যে ঘাতক ড্রাইভার হত্যা করেছে আমরা তার ফাসি চাই।
অনার্স ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী নিঝুম চৌধুরী ও ডিগ্রি ১ম বর্ষের শারমিন আক্তার বলেন, আমাদের স্যার অনেক ভালো মানুষ ছিলেন। আমরা নিরাপদ সড়ক চাই, এবং স্যারের হত্যাকারির দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি চাই।
খাহ্রা আদর্শ কলেজের সভাপতি ও ইউনিক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহা. নূর আলী মুঠোফোনে শুরুতেই নিহত হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আব্বাস আলী পাটওয়ারী মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে বলেন, এমন মৃত্যু কারো কাম্য নয়। বিভিন্ন যায়গায় নিরাপদ সড়কের আন্দোলন হচ্ছে। অন্যদিকে যে যার যার মত করেই চলছে। একজন তরতাজা মানুষের মৃত্যুতে গাড়ি চালকরা কিছুই মনে করছে না। এর মূল কারণ শিক্ষার অভাব। নাম মাত্র ড্রাইভিং শিখে তারা সড়ক-মহাসড়কে বেড়িয়ে পড়েন। এতে করে মাঝে মাঝে আমাদের এই নির্মম ঘটনা শুনতে হয়। আমরা সরকারকে অনুরোধ করবো যাকে তাকে ড্রাইভিং লাইসেন্স না দিয়ে প্রশিক্ষনের মাধ্যমে যদি লাইসেন্স দেওয়া হয় তাহলে হয়তো এমন দুর্ঘটনা থেকে অনেকেই বেঁচে যাবে। সেই সাথে নিহত আব্বাস আলীর মৃত্যুর ঘটনা সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে নিশ্চিত করার জন্য সংশৃষ্ট কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
মানববন্ধন অনুষ্ঠানে আদর্শ কলেজের সহকারী অধ্যাপক গোলাম মওলা, আব্দুল মালেক দেওয়ান, আবদুল আজিজ, গোলাম ফারুক, আকলিমা আক্তার, শ্রুভ্রা দেব নাথ, জাহানারা খাতুন, ফয়জুন নাহার সুলতানা, আজমা বেলায়েত, কলেজ গভনিং বডির হিতৈষী সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন মোড়ল, অভিভাবক প্রতিনিধি আশরাফ হোসেন, রঞ্জিত কুমার, বীর মুক্তিযোদ্ধা আ. হালিম খান, সাব্বির হোসেন বাদল সহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
মালার তদন্তকারী কর্মকর্তা আছিফ উজ্জামান বলেন, আমরা এখনো ঘাতক চালক ও গাড়ী সনাক্ত করতে পারিনি। তবে তদন্ত চলছে।
উল্লোখ্য, গত ১৬ জানুয়ারি সোমবার খাহ্রা আদর্শ ডিগ্রি কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আব্বাস আলী পাটোয়ারি (৫০) কে হাঁসাড়া হাইওয়ে থানা সংলগ্ন এক্সপ্রেসওয়ের সার্ভিস লেনে ঢাকা মুখী একটি ড্রামট্রাক চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে নিমতলা জনসেবা ক্লিনিকে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
খাহ্রা ডিগ্রি কলেজ সূত্রে জানা যায়, আব্বাস আলী পাটওয়ারী প্রতি সোমবার কলেজের দায়িত্ব পালন করে ঢাকার চিটাগাং রোডের গাড়ি করে বাড়িতে যান। আব্বাস আলী পাটোয়ারী ১৯৯৯ সালে খাহ্রা কলেজে যোগদান করেন। তার ২ মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে চট্টগ্রাম বিশ্বিবিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। ছোট মেয়ে গত বছর এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন। ১৭ জানুয়ারি মঙ্গলবার সকাল ১০ টায় সাইনবোর্ড এলাকায় জানাজা শেষে ওই এলাকায় দাফন করা হয়। আব্বাস আলী পাটোয়ারীর চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের আসাদ আলী পাটোয়ারীর ছেলে।