ডেস্ক : চলাচলের জন্য প্রস্তুত স্বপ্নের পদ্মা সেতু। ২৫ জুন ২০২২ খ্রি. শনিবার সকালে হয়ে গেলো বাংলাদেশর কোটি মানুষের স্বপ্ন এ সেতুর উদ্বোধন করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপরই উন্মুক্ত হলো পদ্মার ওপর নির্মিত এ স্বপ্নের সেতু। ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা হলো আরও সময়সাশ্রয়ী।
পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প। রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে। দেশের মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলায় প্রকল্পের অবস্থান। সেতুর উত্তর প্রান্তে মাওয়া, লৌহজং, মুন্সিগঞ্জ এবং দক্ষিণ প্রান্তে জাজিরা, শরীয়তপুর, শিবচর ও মাদারীপুর। ২০০৪ সালের জুলাই মাসে জাপানের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা জাইকার সুপারিশ মেনে মাওয়া-জাজিরার মধ্যে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্মা সেতুর নকশা প্রণয়নে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত করে। মহাজোট সরকার শপথ নিয়েই তাদের নিয়োগ দেয়। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার সেতু করার চূড়ান্ত নকশা করা হয়।
২০০৭ সালে ১০ হাজার ১৬১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প একনেক সভায় অনুমোদন পায়। পরে নকশা পরিবর্তন হয়ে দৈর্ঘ্য বেড়ে যাওয়ায় নির্মাণ ব্যয়ও বাড়ে। ২০১১ সালে ২০ হাজার ৫০৭ কোটি ২০ লাখ টাকার সংশোধিত প্রকল্প একনেকে অনুমোদন পায়। ২০১৬ সালে আবারও আট হাজার ২৮৬ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ালে মোট ব্যয় দাঁড়ায় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। সবশেষ প্রকল্পের মোট ব্যয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৮ লাখ ৭৬ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে। এর পুরো টাকাই সরকারি অর্থায়ন।
মূল সেতুর ঠিকাদার ছিলো পদ্মা সেতু নির্মাণে চুক্তিবদ্ধ কোম্পানির নাম চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেডের আওতাধীন চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানি। মূল চুক্তিমূল্য ১২ হাজার ১৩৩ কোটি ৩৯ লাখ ৩০ হাজার টাকা। কাজ শুরু হয় ২৬ নভেম্বর, ২০১৪। চুক্তি অনুযায়ী কাজ সমাপ্তির তারিখ ছিলো ২৫ নভেম্বর, ২০১৮। পরে কয়েক ধাপে সময় বাড়ানো হয়।
কাজের মূল সময়সীমা ধরা হয়েছিলো ৪৮ মাস। বর্ধিত সময় ৪৩ মাস। কাজ সমাপ্তির পুনঃনির্ধারিত তারিখ ৩০ জুন, ২০২২ (বর্ধিত সময়সহ)। এ পর্যন্ত কাজের ভৌত/বাস্তব অগ্রগতি ৯৮ শতাংশ। রেল সংযোগ পদ্মা সেতুতে রেললাইন স্থাপন হচ্ছে স্প্যানের মধ্য দিয়ে। পদ্মা সেতুর ধরন দ্বিতলবিশিষ্ট। রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ।
পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। পদ্মা সেতুর প্রস্থ ৭২ ফুট, এতে থাকবে রয়েছে লেনের সড়ক। মাঝখানে রোড ডিভাইডার। পদ্মা সেতুর ভায়াডাক্ট ৩ দশমিক ১৮ কিলোমিটার। ভায়াডাক্ট পিলার ৮১টি। পানির স্তর থেকে সেতুর উচ্চতা ৬০ ফুট। পাইলিং এর গভীরতা ৩৮৩ ফুট। এতে মোট পিলার রয়েছে ৪২টি। মোট পাইলিং রয়েছে ২৮৬টি। পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক দুই প্রান্তে (জাজিরা ও মাওয়া) ১৪ কিলোমিটার।
প্রকল্প এলাকায় প্রায় ১৪ কিলোমিটার নদীশাসন করতে হচ্ছে। এর মধ্যে মাওয়া এলাকায় ১ দশমিক ৬ কিলোমিটার এবং বাকি ১২ দশমিক ৪০ কিলোমিটার জাজিরা এলাকায়। সেতুর কাজের ঠিকাদার সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেড চায়না। মোট চুক্তিমূল্য ৮ হাজার ৭০৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা।