নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার ইছামতি নদীর দেওতলা থেকে হাসনাবাদ পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার ইছামতি নদীর তীর ঝুড়ে গ্রাম বাংলার শত বছরের ঐতিহ্যর নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকেল ৪ টার দিকে নৌকা বাইচ ঐতিহ্য রক্ষা জাতীয় কমিটির পরিচালনায় এবং হাসনাবাদ, মৌলভীডাঙ্গি, নয়ানগর, মোলাশীকান্দা, নতুন বান্দুরা ও পুরাতন বান্দুরা গ্রামবাসীর উদ্যোগে ও সার্বিক সহযোগিতায় এ নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হয়।
সরেজমিনে নৌকা বাইচ উপলক্ষে নদীর দুই তীরে হাজারো দর্শনার্থীর উপস্থিতি দেখা গেছে। সেখানে বসেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী মেলা। স্থানীয়রা বলছেন, বাইচ উপলক্ষ্যে তাদের বাড়িতে এসেছে নতুন অতিথি। বাড়িতে বাড়িতে আয়োজন করা হয়েছে নানা মুখরোচক খাবারের। এমন আয়োজনে খুঁশি তাঁরা।
নৌকা বাইচ আয়োজক কমিটির সভাপতি মো. কামাল হোসেন বলেন, নৌকা বাইচ ঐতিহ্য রক্ষা জাতীয় কমিটি ও নৌকা মালিক সমিতির দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গ্রামবাসীর সার্বিক সহযোগিতায় ৩৫ বছর পর আবার দেওতলা থেকে হাসনাবাদ পর্যন্ত নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হলো। আগামীতেও এমন নৌকা বাইচের আয়োজন করা হবে।
নৌকা বাইচ ঐতিহ্য রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাশিম মোল্লা বলেন, নৌকা বাইচে ঢাকা, মানিকগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জ থেকে ১৬টি ( ঘাসি ও খেলনা নৌকা) নৌক বাইচ প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করেছেন। দুটি করে নৌকার টান হয়েছে। আমাদের এই বাইচ কমিটি দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় যেসব স্থানে আগে নৌকা বাইচ হতো কিন্তু বর্তমানে নানা কারণে বন্ধ আছে, সেসব এলাকার আয়োজকদের বাইচ আয়োজনে উদ্বুদ্ধ করি। নবাবগঞ্জে নৌকা বাইচের ঐতিহ্য প্রায় শত বছরের। আমাদের এলাকার বাইচের সুনাম দেশব্যাপী।
নৌকা বাইচ ঐতিহ্য রক্ষা জাতীয় কমিটির সভাপতি মাসুদ মোল্লা বলেন, আমরা প্রতি বছর অনেক কষ্ট করে নৌকা বাইচ ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে বাইচের আয়োজন করি। কিন্তু বর্তমানে নদীতে পানি কম থাকার কারণে ও কচুরীপানার কারণে আগের মতো নৌকা বাইচ আয়োজন করতে পারি না। সরকারের পক্ষ থেকে নদীর কচুরিপানা মুক্ত করতে সহায়তা করলে আরো নৌকা বাইচ আয়োজন করতে সক্ষম হব।
নৌকা বাইচ দেখতে আসা গৃহবধু হাসিনা আক্তার বলেন, আমাদের বাসা দেওতলা এলাকায় নৌকা বাইচ উপলক্ষে বাড়ীতে নতুন মেহমান এসেছে। সেই উপলক্ষে বাড়ীতে ভাল খাবার-দাবারে আয়োজন করেছি। নৌকা বাইচ উপলক্ষে সবাই এক সাথে হতে পেরে আমরা মহাখুঁশি। এরকম আয়োজন যাতে প্রতিবছর হয় সে আশা করি।
নৌকা বাইচ প্রতিয়োগীতায় কামাল এন্ড সন্স প্রথম স্থান, বলধারা ঐতিহ্য দ্বিতীয়, মাসুদ রানা তৃতীয় এবং শিকদার বাড়ী চতুর্থ স্থান অর্জন করেন। পরে প্রথম স্থান অর্জন কারীদের একটি ১৫০ সিসি মোটরসাইকেল, দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারীদের একটি ফ্রিজ এবং তৃতীয় ও চতুর্থ স্থান অর্জনকারীদের এলইডি টেলিভিশন প্রদান করেন আয়োজন কমিটি।
পুরুষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দোহার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মো. আলমগীর হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন দোহার পৌরসভার মেয়র আসলাম উদ্দিন, মাসুম মোল্লা, রাশিম মোল্লা প্রমুখ।