আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইউটিউব গ্রাম, শুনে অবাক হচ্ছেন নাকি দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন যে এটা কি গ্রাম নাকি কোনো ইউটিউব চ্যানেল। কিন্তু আসলেই এটি একটি গ্রামের নাম। এই গ্রামের অধিকাংশ মানুষের ইউটিউবের সঙ্গে জড়িত বলেই এই নামকরণ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারের একটি প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।ইন্দোনেশিয়ার মধ্য জাভার একটি ছোট গ্রাম কাসেগেরান। এই গ্রাম এতটাই ছোট এবং প্রত্যন্ত যে জাভার মানচিত্রে দুরবিন দিয়ে খুঁজলেও এর সন্ধান মেলানো কষ্ট। কিন্তু ইন্টারনেটে বেশ পরিচিত এই গ্রাম। এই গ্রামের পিছিয়ে থাকা মানুষরা ক্রমে ইন্টারনেটের পরিচিত মুখ হয়ে উঠছেন।কাসেগেরান নামের সঙ্গে বিশ্বের পরিচিতি নেই ঠিকই, কিন্তু ‘ইউটিউব ভিলেজ’ বা ‘ইউটিউব গ্রাম’ বলতে এক ডাকেই বোঝা যায় যে কোনো জায়গার কথা বলা হচ্ছে। কাসেগেরান গ্রামেরই নতুন নামকরণ হয়েছে ইন্দোনেশিয়ার ‘ইউটিউব গ্রাম’।এই গ্রাম সম্প্রতি নতুন নতুন ইউটিউবারদের গড়ে তুলতে শুরু করেছে। গ্রামের মানুষ নিজেদের পেশা বদলে ইউটিউবে ভিড় জমাতে শুরু করেছেন। যাতে গ্রামের সার্বিক আর্থিক উন্নয়নও হয়েছে।আগে এই গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ মূলত চাষাবাদ করেই উপার্জন করতেন। এর বাইরে টুকটাক কাজও করতেন। ফলে গ্রামে বেশির ভাগই মানুষই দরিদ্র থাকতেন।এই গ্রামেরই একজন বাসিন্দা সিশ্বানতো। তিনি মোটরসাইকেলের মিস্ত্রি। একটি মোটরসাইকেল মেরামতির দোকানে কাজ করেন তিনি। কিন্তু দিনভর পরিশ্রম করে যা উপার্জন করেন, তা দিয়ে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ছিল তার।
সিশ্বানতো এক দিন ঠিক করলেন মোটরসাইকেল মেরামতির যে দক্ষতা তার রয়েছে, তা দিয়েই ভিডিও বানিয়ে ইউটিউবে আপলোড করবেন তিনি।যেই কথা সেই কাজ, শুরু করে দিলেন তিনি। কিন্তু তখন ভালো ফোন ছিল না তার কাছে। তার ওপর এই প্রত্যন্ত এলাকায় ইন্টারনেট ঠিকমতো কাজ করে না। অনেক বাধা পেরিয়েই ইউটিউব-যাত্রা শুরু হয় তার।পরে অবশ্য ইউটিউব থেকে যে টাকা উপার্জন হয়েছিল সেই টাকা দিয়েই ভালো মোবাইল ফোন কিনে নেন তিনি। ইউটিউব যে উপার্জনের মাধ্যমে হতে পারে, তা কখনও কল্পনাতেও আনেননি তিনি।শুধু সিশ্বানতোই নন, তার মতো এই গ্রামের আরও অনেকেই ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করতে শুরু করেছেন। শুরুটা অবশ্য করে দিয়েছিলেন সিশ্বানতোই।এরপর থেকে তাদের দৈনন্দিন জীবনের বাইরে বেরিয়ে আলাদা করে কিছু করতেও হয় না। যিনি চাষাবাদ করেন, তিনি সেটাই ভিডিও করে ইউটিউবে পোস্ট করে দিচ্ছেন। যিনি গ্রামের ছেলেমেয়েদের টিউশন পড়ান, তিনিও সেটা তুলে ধরছেন ইউটিউবে।ইন্টারনেটের সমস্যার জন্য অনেক বাধার সম্মুখীনও হতে হয় তাদের। তার ওপর ভালো ক্যামেরা না থাকায় সব সময় ঠিকমতো ভিডিও করে উঠতে পারেন না তারা।তাই বলে হাল ছাড়েনি ওই গ্রামের বাসিন্দারা। ইউটিউবের হাত ধরেই মানচিত্রে নিজের জায়াগটুকু করে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে জাভার এই প্রত্যন্ত গ্রাম।