ডেস্ক রিপোর্ট : চরকিতে লাগল হাওয়া। ঘুরল ফিল্ম, ফান, ফুর্তির চাকা। আজ থেকে যাত্রা করল বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম চরকি। দেশি প্ল্যাটফর্মে বিশ্বমানের বিনোদনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে এল তারা। প্ল্যাটফর্মটিতে দেখা যাবে সিনেমা, সিরিজ, শো, তথ্যচিত্রসহ বৈচিত্র্যে ভরা প্রায় ২০০ কনটেন্ট।
করোনায় বিপর্যস্ত যখন চলচ্চিত্রশিল্প, অন্ধকার প্রেক্ষাগৃহের রুপালি পর্দা, ঠিক তখনই বিশ্বজুড়ে আশার আলো হয়ে দেখা দেয় ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম। বাংলাদেশেও জনপ্রিয় হতে থাকে দেশি-বিদেশি প্ল্যাটফর্ম ও কনটেন্ট, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়তে থাকে কনটেন্ট ইন্ডাস্ট্রি। আর এই বিস্তৃতিরই সহযাত্রী হতে চলেছে চরকি। ঢাকাকে বাংলা কনটেন্টের রাজধানী হিসেবে বিশ্বের সামনে তুলে ধরার প্রত্যয় তাদের। তাই তো কোনো প্রতিবন্ধকতাই আমলে নেয়নি তারা।
মিডিয়াস্টার লিমিটেডের এই প্ল্যাটফর্মটি ঘিরে বাংলা চলচ্চিত্র ও নাটকের দর্শকদের আগ্রহের শেষ নেই। চলতি বছরের শুরুতে চরকি তাঁদের কাছে একটি অঙ্গীকার করেছিল। বলেছিল, ১২ মাসে ১২টি সিনেমা মুক্তি দেবে তারা। সেই থেকে শুরু হয় দর্শকদের অপেক্ষা। চরকিও তার প্রতিশ্রুতি থেকে সরে যায়নি। ফিল্ম…ফান…ফুর্তির পসরা সাজিয়ে এখন তারা দর্শকের সামনে হাজির।
প্ল্যাটফর্মটির সৃষ্টিতে যে তারকাবহুল প্রযোজনা, গুণী নির্মাতাদের সম্মিলন, আন্তর্জাতিক মানের নির্মাণ আর টানটান উত্তেজনায় ভরা দেশি গল্পের অনন্য মিশেল থাকবে—শুরুতেই তা আঁচ করে নেন দর্শক। একে একে আসতে থাকে চরকির সব অভিনব আর নান্দনিক কনটেন্টের খবর। আর এসব নিয়ে দিন কয়েক পরপরই হইহই রইরই পড়ে যেত ফেসবুক, ইউটিউবে। সিরিজ-সিনেমা রিলিজের আগেই ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে চরকির কনটেন্টগুলোর পোস্টার, ট্রেলার আর ট্রেলারের রিভিউ। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার দর্শকের মধ্যে বাড়তে থাকে কৌতূহল; আগ্রহের পারদ উঠতে থাকে উঁচু থেকেও উঁচুতে।
শুধু দেশি দর্শক নয়, চরকি বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বাংলা ভাষাভাষীদের প্ল্যাটফর্ম। কনটেন্টও আছে পশ্চিমবঙ্গসহ নানা দেশের। প্রযুক্তিগতভাবেও সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা আছে তাদের। বাংলাদেশের দর্শকেরা যেমন সহজেই দেশে বসে এই প্ল্যাটফর্ম দেখতে পাবেন, তেমনি প্রবাসী ও ভিনদেশিরাও স্বচ্ছন্দে উপভোগ করতে পারবেন চরকি । প্রতিটি দর্শকই চরকির আপনজন। যেমন আপন ফ্রি কনটেন্ট দেখতে আসা দর্শক, ততটাই আপন সাবস্ক্রিপশন কিনে চরকিতে আসা স্থায়ী দর্শক। তবে স্থায়ী দর্শক, যাঁরা সাবস্ক্রিপশন কিনে চরকি দেখবেন, তাঁদের জন্য থাকবে কিছু বিশেষ সুযোগ। যেমন বিজ্ঞাপনহীন কনটেন্ট দেখতে পাবেন তারা, পাবেন সবার আগে চরকির অরিজিনাল কনটেন্ট উপভোগের সুযোগসহ আরও অনেক কিছু।
কেউ চাইলে একটা ঝাঁ-চকচকে নতুন সিনেমা বা ওয়েব সিরিজ টিকিট কেটে দেখতে পারবেন, ঠিক যেমন করে সিনেমা হলে দেখা যায়। এখানে সুবিধা হলো, হলে এক টিকিটে শুধু একজনই দেখতে পারেন সিনেমা, কিন্তু চরকিতে এক টিকিটে একসঙ্গে দেখতে পারবে পুরো পরিবার। খরচও হবে সাধারণ একটা টিকিটের চেয়েও অনেক কম।
প্রায় সব ধরনের ডিভাইস থেকে চরকি দেখা যাবে। আইওএস, অ্যান্ড্রয়েড ফোন, আইপ্যাড, ডেস্কটপ, ল্যাপটপ, স্যামসং টিভি, অ্যান্ড্রয়েড টিভি বক্স, ফায়ার স্টিক—সবখানেই আজ থেকে পাওয়া যাবে চরকির অ্যাপ। তা ছাড়া যেকোনো ব্রাউজার ব্যবহার করে ডেস্কটপ বা ল্যাপটপ থেকে চরকির ওয়েবসাইটে (www.chorki.com) দর্শক নির্বিঘ্নে উপভোগ করতে পারবেন। আর যদি বিঘ্ন ঘটে? এর সমাধানও জানিয়েছে প্ল্যাটফর্ম কর্তৃপক্ষ। গ্রাহকদের নিরবচ্ছিন্ন সেবা নিশ্চিত করতে প্রথম দিন থেকেই একটি হেল্পডেস্ক চালু করছে চরকি।
চলমান লকডাউনের কথা মাথায় রেখে চরকি তাদের উদ্বোধনী আয়োজনের জন্য বেছে নেয় অভিনব এক কৌশল। যাত্রা শুরুর দিনেই নিজেদের অরিজিনাল কনটেন্টের ক্যাটালগ প্রকাশ করে তারা। এ আয়োজনের শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন চরকির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা ও নির্মাতা রেদওয়ান রনি। এরপর প্রতিটি কনটেন্টকে দর্শকের সামনে তুলে ধরা হয়।
সূত্রধরের মতো চরকির প্রতিটি কনটেন্টকে এক সুতোয় গাঁথেন উপমহাদেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান। একেকটি অরিজিনালের জন্য একেকটি আলাদা চরিত্রে তিনি ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান। যে প্ল্যাটফর্মের প্রথম দর্শনেই সুনিপুণ অভিনয়ের ছটা লেগেছে, তার মৌলিক প্রযোজনা তো সব প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে যেতেই পারে।
আর বিনোদনপ্রেমীরা এই ঘোরে এমনই ডুবে যেতে পারেন, যেমনটা লিখেছেন কবি শামসুর রাহমান তাঁর ‘সাইক্লোন’ নামের ছড়ায়, ‘লক্ষ্মীপেঁচা, পক্ষীছানা/ ঘুরছে, যেন চরকি সব।’
ফিল্ম… ফান… ফুর্তির এই সাইক্লোনে চরকি হয়ে ঘুরতে আর উড়তে, ব্যাকুল প্রস্তুতি নিয়ে আছেন দর্শকেরা।