ডেস্ক রিপোর্ট : করোনা সংক্রমণ রোধে বিধিনিষেধ আরোপের প্রায় সাড়ে চার মাস পর আজ বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) থেকে শর্ত সাপেক্ষে পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত ও অন্যান্য পর্যটনকেন্দ্র। দীর্ঘ নিরবতা ভেঙে বালিয়াড়ি রাঙাতে পর্যটকদের বরণে প্রস্তুত হয়েছে কক্সবাজার।
ইতোমধ্যে হোটেল-মোটেল ও রেস্তােরাঁগুলো পরিচ্ছন্নতা শেষে পর্যটন সেবার উপযোগী করা হয়েছে। ১৯ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে খোলার খবরে বুধবার (১৮ আগস্ট) বিকেল থেকেই পর্যটকরা আসতে শুরু করেছেন। এতে দীর্ঘদিন জনশূন্য থাকা কক্সবাজারের পর্যটন জোনে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে।
কক্সবাজার সৈকতের পাশাপাশি হিমছড়ি, ইনানী, সাবরাং এক্সক্লুসিভ জোন, ন্যাচারপার্ক, বার্মিজ মার্কেট, ডুলহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কসহ অন্যান্য স্পটগুলো প্রস্তুত হলেও বৈরী আবহাওয়ায় সেন্টমার্টিন যাওয়ার কোনো তোড়জোড় নেই।
বুধবার সন্ধ্যায় দেখা যায়, বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কক্সবাজারে ছুটে এসেছেন অনেকেই। সৈকতে দায়িত্বে থাকা আইনশৃংঙ্খলা বাহিনীর চোখ এড়িয়ে তারা সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে নামছেন।
এ বিষয়ে হোটেল ওশান প্যারাডাইসের পরিচালক আবদুল কাদের মিশু বলেন, ‘অতীতের ক্ষতি কখনো পোষানো যায় না। এরপরও বিধিনিষেধে বেকায়দায় পড়া ব্যবসা আগের মতো সচল করার প্রয়াস থাকবে। যে ক্ষতি হয়েছে এবং যে দেনা বেড়েছে, তা কাটিয়ে উঠতে বেগ পেতে হবে। এরপরও ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছি।’
তার মতো একই কথা বলছেন অন্যান্য হোটেল ব্যবসায়ীরা। একই সঙ্গে পর্যটক টানতে হোটেলগুলো কক্ষভাড়ায় বিশেষ ছাড়ের ঘোষণা দিয়েছে।
হোটেল-মোটেল জোন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ হোটেল ও গেস্ট হাউসের কক্ষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজ শেষ করে পর্যটকদের বরণে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। কাজে ফিরেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও। সৈকতের ছোট ছোট দোকান, হকার, শামুক-ঝিনুকের দোকানগুলোও খোলা হয়েছে।
এ বিষয়ে কক্সবাজার হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউস অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক ও হোয়াইট অর্কিডের জিএম রিয়াদ ইফতেখার বলেন, ‘সরকার পর্যটন শিল্পের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বিধিনিষেধ শিথিল করেছে। এ অবস্থায় শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে হোটেল-মোটেল, রেস্তোরাঁ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় সতর্কতার সঙ্গে কাজ করছে সবাই।’
হোটেল-মোটেল, গেস্টহাউস, কটেজ, রেস্তোরাঁ মালিকদের সাতটি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ফেডারেশন অব ট্যুরিজম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন, ‘বেশিরভাগ হোটেল মালিকরা কক্ষভাড়ায় ছাড়ের ঘোষণা দিয়েছেন। কিছু কিছু হোটেলের কক্ষ অগ্রিম বুকিং হয়েছে। তবে কেউ যেন ৫০ শতাংশের বেশি কক্ষ ভাড়া না দেন, সে ব্যাপারে তদারকি হচ্ছে।’
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, হোটেল সি-গাল, সায়মান বিচ রিসোর্ট, কক্স-টুডে, লং বিচসহ প্রায় সব বড় হোটেলে কক্ষভাড়ায় ৩০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়ের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী বলেন, ‘করোনায় স্থবিরতা এসেছে পর্যটন খাতের ব্যবসায়। গত ৫ মাসে এ খাতে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার লোকসান হয়েছে। এ ক্ষতি পুষিয়ে আনার প্রস্তুতি নিয়ে কর্মতৎপরতা শুরু হয়েছে। ব্যবসা সচল থাকলে ব্যবসায় গতি আসবে বলে আশা রাখছি।’
কক্সবাজার বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মামুনুর রশীদ বলেন, ‘করোনায় ধুঁকছে সম্ভাবনার পর্যটনশিল্প। গত বছরের মতো এ বছরও বিপুল লোকসান গুনেছেন সংশ্লিষ্টরা। করোনা মোকাবিলার পাশাপাশি সব ধরনের ব্যবসা সচল করতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।’
কক্সবাজার টুরিস্ট পুলিশের এসপি মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ‘নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুত আমরা। প্রতিটি পয়েন্টে টিম কাজ করবে। মাঠে থাকবে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ভ্রাম্যমাণ আদালত। তাদের সাথেও মিলে কাজ করব।’
গত বছর করোনা সংক্রমণের গোড়ার দিকে ২৬ মার্চ সাধারণ ছুটি ঘোষণা হলে বন্ধ হয়েছিল পর্যটন। এরপর সংক্রমণ কিছুটা কমে এলে গত বছরের ১৭ আগস্ট চালু হলেও চলতি বছরের ১ এপ্রিল আবার বন্ধ হয়ে যায় পর্যটনকেন্দ্র। দীর্ঘ সাড়ে চার মাস পর ফের সচল হচ্ছে আজ।